Don't Miss
Home / ইসলাম ও জীবন / ইসলামি বিধান / জীবন বিধান / আগামী অক্টোবরেই কেয়ামত- গুজব নাকি সত্যি!

আগামী অক্টোবরেই কেয়ামত- গুজব নাকি সত্যি!

এমএনএ ফিচার ডেস্ক : আগামী অক্টোবরেই কেয়ামত- গুজব নাকি সত্যি! কেয়ামত! শুনলেই কেমন যেন গায়ে কাটা দেয়। অজানা এক আতঙ্ক এবং রহস্যে ছেয়ে যায় সব কিছু।

কেয়ামত আসলে কী? কাকে বলে কেয়ামত এবং কখন সংগঠিত হবে কেয়ামত? এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে বা জানার অনেক বিষয় রয়েছে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে রাসূলে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনাও এসেছে। কেয়ামতের বড় ও ছোট বিভিন্ন আলামত-নিদর্শনও বর্ণিত হয়েছে। ইসলাম ধর্মের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী কেয়ামত হলো সর্বশেষ বিচারের দিবস, চূড়ান্ত বিচার, শেষবিচারের দিন বা পালনকর্তার দিন, যার আরবি হলো- ইয়াওম আল-কিয়ামাহ ।

কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? এটি খুব পুরানো এবং অনেক আলোচিত একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গেলে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে যা পাওয়া যায় তা হলো- হজরত জিব্রাঈল (আ.) একদা ছদ্মবেশে মহানবী (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে আরজ করেন, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? মহানবী (সা.) বলেন, জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি থেকে জিজ্ঞাসাকারী অধিক জ্ঞাত নয়। অর্থাৎ কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। (আল-হাদিস)

এই মর্মে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেন, কেয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো ফল আবরণমুক্ত হয় না এবং কোনো নারী সন্তান প্রসব ও গর্ভধারণ করে না। (সুরা : হা-মিম-সাজদা : ৪৭)

পবিত্র কুরআনের অপর আয়াতে বলা হয়েছে, তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন হবে? আপনি বলে দিন, এর খবর তো আপনার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তিনি তা পরিষ্কারভাবে দেখাবেন। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৮৭)

মহানবী (সা.) বলেন, গুপ্ত জ্ঞানের বিষয় পাঁচটি। ১. কেয়ামত। তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। ২. আগামী দিন কী ঘটবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ৩. কখন বৃষ্টি হবে, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ৪. কার কোথায় মৃত্যু হবে, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ৫. কখন কেয়ামত হবে, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। (সহিহ বুখারি)।

এরপরও কেয়ামত নিয়ে দুনিয়ার মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ নেই। বিভিন্ন সময় অনেকেই গবেষণা করেছেন কেয়ামত নিয়ে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত কেয়ামতের আলামতগুলোর সাথে বিজ্ঞান-মহাকাশজ্ঞান ও অন্যান্য ভৌগোলিক বিষয়াবলীকে মিলিয়ে অনেক গবেষক বা বিজ্ঞানী বিভিন্ন সময় কেয়ামত সংগঠিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পূর্বাভাসই বাস্তব বলে প্রমাণিত হয়নি।

মেইল অনলাইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, কেয়ামত বিষয়ক নতুন তত্ত্বের নতুন একজন জনক ডেভিট মিডি। Planet X – The 2017 Arrival (প্লানেট এক্স দ্য টু থাউজেন সেভেনটিন এরাইভ্যাল) নামে তিনি একটি বই লিখেছেন। ডেভিড তার গ্রন্থে লিখেছেন, ‘প্লানেট এক্স নামে একটি তারকা নিজের কক্ষপথ থেকে বিচ্যূত হয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এবং ২০১৭ সালের অক্টোবরে পৃথিবীর সঙ্গে তার সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভবনা খুবই বেশি।’

তিনি তার গ্রন্থে আরো লিখেছেন, ‘প্লানেট এক্স শুধু একা ধেয়ে আসছে বিষয়টি এমন নয় বরং তার সাথে আরো ৭টি উপগ্রহ একই সাথে এবং একই পরিমাপে ধেয়ে আসছে। ৭টি উপগ্রহের মধ্যে নিবিরু নামক উপগ্রহটিও রয়েছে। যে নিবিরুর ব্যাপারে ২০১৩ সালে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভবনাও এর মাধ্যমে পৃথিবীর জীবের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছিলো।’ বইটির পিডিএফ ভার্সন পড়া যেতে পরে এই লিঙ্কে গিয়ে।

উল্লেখ্য, নিবিরু একটি বৃহৎ আকারের নীলাভ উপগ্রহ। নিবিরুকেই অনেকে প্লানেট এক্স বলে অভিহিত করেছেন। এই উপগ্রহটির অবস্থান পৃথিবীর প্রান্তে। ডেভিড মিডি দাবি করেছেন, ‘তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, জ্যোতির্বিদ্যা ও বাইবেলে বর্ণিত কেয়ামতের নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে তার থিওরি প্রণয়ন করেছেন। তার কথা ঠিক থাকলে কেয়ামতের বাকি আছে অল্প কয়েক সপ্তাহ।’ এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা যেতে পারে।

প্লানেট এক্স দ্য টু থাউজেন সেভেনটিন এরাইভ্যাল গন্থের লেখক ডেভিডের আরও দাবি, ‘গত কয়েক শত বছর আগে এক বিস্ফোরণের কারণে নিবিরু নিজ কক্ষপথ থেকে বিচ্যূত হয় এবং পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা শুরু করে। এ বছরের (২০১৭) অক্টোবর নাগাদ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা খুব তীব্র।’ ডেভিডের এই দাবিকে অধিকাংশ মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছেন, ‘পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্রগুলোর প্রায় সবই তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। কিন্তু নিবিরু নামক ধাবমান কোনো নক্ষত্র এখনও তাদের দৃষ্টিতে নেই।’

এছাড়া এই ধরনের থিওরি বা গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ এর আগেও অনেক বিজ্ঞানী বা গবেষক এমন বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছেন এবং তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি কেউ কেউ ইতোপূর্বে কেয়ামতের দিন-তারিখও ঘোষনা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

এছাড়াও ইসলামি ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী এখনো কেয়ামতের বড় বড় বেশ কিছু নিদর্শন প্রকাশ পায় নি। সুতরাং অক্টোবরে কেয়ামতের সম্ভাবনা খুবই সামান্য বা একেবারে নেই বললেও ভুল হবে না। একজন মুসলিম হিসেবে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে ইসলামের দিক-নির্দেশনা মান্য করাই সবচেয়ে উত্তম। আর ইসলাম এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে মতামত ব্যক্ত করেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তারা তোমাকে কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তা কখন ঘটবে? তুমি বল, এর জ্ঞান তো রয়েছে আমার রবের নিকট। তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ করবেন।’ (আরাফ, ০৭ : ১৮৭) এছাড়া আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘কেয়ামত নিকটবর্তী। আল্লাহ ছাড়া কেউ তা প্রকাশ করতে সক্ষম নয়।’ (নাজম, ৫৩ : ৫৭-৫৮)

মহাবিশ্ব বর্তমানে সম্প্রসারণশীল অবস্থায় রয়েছে বা সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু কেউই জানে না কিংবা ধারণা করতে পারে না যে ঠিক কখন এই সম্প্রসারণ ও বিস্তৃতি বন্ধ হবে এবং সংকোচন শুরু হবে। সুতরাং এর অর্থ হলো, সঠিকভাবে কেউ কখনো ভবিষ্যৎবাণী করতে পারবে না কিংবা জানতে পারবে না কেয়ামত দিবস কখন শুরু হবে। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ মহানই মহাবিশ্বের সংকোচনের সময় সম্পর্কে জানেন এবং কেয়ামত দিবসের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে অবহিত।

x

Check Also

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলতময় আমল

এমএনএ ফিচার ডেস্ক : আরবি (হিজরি) বছরের শেষ মাস জিলহজ। কুরআনে বর্ণিত হারাম মাসসমূহের একটি। এ ...