Don't Miss
Home / জাতীয় / সরকার / আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

এমএনএ রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনি আপনার  সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখুন। তারা কি করছে কার সাথে মিশছে, কেউ কখনও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে কিনা, কেউ যেন জঙ্গিবাদে না জড়ায় আপনারা নিজেরাই খোঁজ খবর নিন।

শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম বলেছে, আত্মঘাতী হওয়া মহাপাপ, গোনাহর কাজ। আজ যারা বিপথে যাচ্ছে, তারা যেন সৎ পথে ফিরে আসে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, আত্মহননের পথ যেন বেছে না নেয়।

আজ বুধবার ফরিদপুর জেলা শহরের সরকারি রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শহর শাখার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আগামীতে ফরিদপুরকে বিভাগ করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকাকে ভেঙে ময়মনসিংহ বিভাগ করা হয়েছে। আগামীতে ঢাকাকে ভেঙে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাকে নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ করা হবে। সেই পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণ যেন আরো বেশি সেবা পায়, কাজ পায় এ লক্ষ্যে নতুন বিভাগ করা হবে বলে জানান তিনি।

উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ মানেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ ভাষার মর্যাদা পেয়েছে, স্বাধীনতা পেয়েছে। মানুষ যখনই নৌকায় ভোট দিয়েছে, তখনই তাদের উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। তাই ২০১৯ সালে দেশে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, একটি ছেলেমেয়েও যেন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তিতে না জড়ায়, সেজন্য বাবা-মা, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিবের বন্ধু আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। নৌকায় ভোট দিলেই মানুষ কিছু পায়। নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই এদেশের মানুষ ১৯৪৮ সালে যে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই ভাষার মর্যাদা পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস করেছে। আওয়ামী লীগই শহীদ মিনার গড়ে তুলেছে। সত্তরের নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলার মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত লাখো মানুষের কাছে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার চাইলে জনতা দুই হাত তুলে তার প্রতি সমর্থন জানান। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার চাই। একই সঙ্গে নৌকা মার্কার জন্য মানুষের কাছে ভোটও চাইবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আমাদের পথ নয়। ইসলাম এটি সমর্থন করে না। আত্মহননের পথও ইসলাম পছন্দ করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। অথচ ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করে ইসলামকে কলুষিত করা হচ্ছে। জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

দীর্ঘ নয় বছর পর প্রধানমন্ত্রীর ফরিদপুরে আগমন ও তার জনসভাকে ঘিরে গোটা জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটিই ছিল ফরিদপুরে প্রথম সফর। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এখানে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

প্রায় ৩০ মিনিটের বক্তব্যে পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকসহ বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফরিদপুরবাসীও ভুলে যায়নি বিএনপি-জামায়াত কী অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছিল তারা। বাংলাভাইসহ জঙ্গিবাদও সৃষ্টি করেছে তারা। মানুষের সম্পদ লুটপাট করে নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলেছে। এদেশের মানুষের কল্যাণে কিছুই করেনি।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জামায়াত জোটের সন্ত্রাসের হাত থেকে এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও রক্ষা পায়নি। তাদের পেট্রোল বোমার হাত থেকে রক্ষা পায়নি কোমলমতি শিশু এবং শিক্ষকরাও। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হলো ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করা।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত এখানেই থেমে থাকেনি। এদেশে সবসময়ই অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তারা। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। তাদের রাজনীতিই হচ্ছে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পোড়ানো। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। হুকুম দিয়েছেন কে? খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। খালেদা জিয়া না-কি সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণই যখন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তখন খালেদা জিয়া নাকে খত দিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জঙ্গিবাদের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গিরা শুধু নিজেদের পরিবারই নয়, গোটা
দেশের মান-মর্যাদা ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে।

দেশ ও মানুষের কল্যাণে তার সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই। মানুষের কল্যাণ ও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না। ইনশাল্লাহ আমরা ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবো।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের উন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ফরিদপুর চিরদিনই অবহেলিত ছিল। ফরিদপুরের উন্নয়নে আমরা ২০০৮ সালে যেসব কাজ শুরু করেছিলাম, আজ সেগুলোই উপহার হিসেবে আপনাদের দিয়ে গেলাম। আপনারাই দেখেছেন, ফরিদপুরের কী উন্নয়ন আমরা করেছি। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। ফরিদপুর জাতির পিতার এলাকা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এই ফরিদপুরের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই ফরিদপুরের এত উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় ফরিদপুরবাসীকে অভিনন্দনও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা শহরের শেখ জামাল স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন। এরপর শহরতলীর বদরপুরে তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুরালয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজ ও বিশ্রাম শেষে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে জনসভাস্থলে এসে পৌঁছলে জনতা বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ও তুমুল স্লোগানের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় জাতীয় পতাকাসহ রংবেরঙের পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় তাকে। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার ৩৫ কোটি লাখ টাকা ব্যয়ে শেষ হওয়া ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভবন, শিশু একাডেমি ভবন, পাসপোর্ট অফিস ভবন, মেরিন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিসহ ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুরের কুমার নদ খনন প্রকল্পসহ ১২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে জনসভায় বক্তব্য শেষে বিকেল সোয়া ৫টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় রওয়ানা হন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা নাগাদ তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী।

জনসভার শুরুতে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, স্বেচ্ছাসবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মাস্টার, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী প্রমুখ। পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন।

x

Check Also

ব্যাংকের লাভ-ক্ষতির হিসাব তৈরির সুুযোগ জুন পর্যন্ত বাড়লো

এমএনএ অর্থনীতি রিপোর্ট : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে বার্ষিক আর্থিক লাভ-ক্ষতির ...