আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর নেই
Posted by: News Desk
January 22, 2019
এমএনএ রিপোর্ট : দেশবরেণ্য গীতিকার, সুরকার, অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা ও সংগীত পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আর নেই (ইন্না লিল্লালি … রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের সংগীত ও শিল্পাঙ্গনে। তার অকালে চলে যাওয়া সহকর্মীদের কেউ-ই মেনে নিতে পারছেন না। শোকে স্তব্ধ সবাই।
আজ মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আধুনিক বাংলা গানের এই প্রবাদ পুরুষ। চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণার পর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ আফতাবনগরের ২৯ নং বাসা, রোড ২ এ নিজ বাসভবনে রাখা হয়েছে। সেখানে জড়ো হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, চলচ্চিত্র শিল্পীসহ শিল্পাঙ্গনের সবাই। তার লাশ দেখে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
বরেণ্য এ শিল্পীর লাশ আগামীকাল বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে। সেখানে বেলা ১১টায় তাকে সর্বস্তরের জনতা শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।
তাঁর ছেলে সামি জানান, কিংবদন্তী এই সংগীত ব্যক্তিত্বকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
তবে তার দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বোন দেশে ফিরলে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, বুলবুলের জানাজার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। একমাত্র ছেলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি জানান বলেন, বুলবুলের দুই বোন। একজন থাকেন বিদেশে। তিনি ফিরবেন আগামীকাল বুধবার সকালে। তার জন্য অপেক্ষা করা হবে।
বুলবুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হবে বুলবুলের লাশ। আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ১২টা পর্যন্ত তার মরদেহ রাখা হবে।
সেখানে বরেণ্য এ শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে এবং সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা জানাবেন। পর্বটি পরিচালনা করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নেয়া হবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লাশ। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম জানাজা। বরেণ্য এ শিল্পীর মরদেহ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলী বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন।
১৯৮৪ সালে নয়নের আলো চলচ্চিত্রের সংগীতায়োজন করেন বুলবুল। পরিচালনায় ছিলেন বেলাল আহমেদ। ওই সিনেমার জন্য লেখা তার বেশ কয়েকটি গান তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সেগুলো হচ্ছে- ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে’।
এর পরের ৪০ বছরে মরণের পরে, আম্মাজান, প্রেমের তাজমহল, অন্ধ প্রেম, রাঙ্গাবউ, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, পড়ে না চোখের পলক, তোমাকে চাই, লাভ স্টোরি, ভুলোনা আমায়, আজ গায়েহলুদ, লাভ ইন থাইল্যান্ড, আন্দোলন, মন মানে না, জীবন ধারা, সাথী তুমি কার, হুলিয়া, অবুঝ দুটি মন, লক্ষ্মীর সংসার, মাতৃভূমি, মাটির ঠিকানাসহ দুশ শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন বুলবুল।
তবে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার পান ২০০১ সালে এবং হাজার বছর ধরে সিনেমার জন্য ২০০৫ সালে। আর সংগীত জগতে অনবদ্য আবদানের জন্য ২০১০ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে একুশে পদক দেয় সরকার।
সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপাসহ বাংলাদেশি প্রায় সব জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর গাওয়া বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা তিনি। ১৯৭৬ সাল থেকে তার নিয়মিত গান করা। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
এ জনপ্রিয় শিল্পীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায়। ১৯৭১ সালে বুলবুল ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু কিশোর বয়স হলেও ঘরে বসে থাকেননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বুলবুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাইফেল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রণাঙ্গনে। রাজাকার ও পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকারও হয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন ও সুর করেছেন।
‘এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা’, ‘আয় রে মা আয় রে’, ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’-এমন বহু কালজয়ী গানের স্রষ্টা এ শিল্পী।
তিনি প্রেমের জন্য লিখেছেন- ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘ভাড়া কইরা আনবি মানুষ’, ‘প্রেমের তাজমহল’সহ আরও বহু জনপ্রিয় গান।
ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ছেলে সামির আহমেদ।
বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তী।
নেই বুলবুল আর ইমতিয়াজ আহমেদ 2019-01-22