Don't Miss
Home / নির্বাচনী হালচাল / জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট চলছে

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট চলছে

এমএনএ রিপোর্ট : প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো দেশের ৫৯ জেলায় আজ বুধবার জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন।

৬১টি জেলা পরিষদে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ফেনী ও ভোলায় এরই মধ্যে সব পদের প্রার্থীই ভোট ছাড়া বিজয় নিশ্চিত করে ফেলেছেন।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দল এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি। তবে ৬১ জেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে অন্তত ৩৩টিতে ক্ষমতাসীন দলের ৫৩ বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এসব প্রার্থীকে ঘিরেই নির্বাচনে নানা অঘটনের
আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দু’জন, গণফোরামের একজন, জাতীয় পার্টির (জেপি) তিনজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তিনজন, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) একজন এবং দলীয় পরিচয় নেই এমন আটজন প্রার্থী হয়েছেন।

ইসি কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা মাত্র ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ এবং নারী ভোটার ১৪ হাজার ৮০০ জন। একজন চেয়ারম্যান, পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য এবং ১৫ জন সাধারণ সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১ জেলায় নতুন পরিষদ গঠন করবেন আজকের ভোটের নির্বাচিতরা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার চট্টগ্রাম জেলায় দুই হাজার ৭০৬ এবং সর্বনিম্ন ভোটার মেহেরপুরে ২৬৯ জন।

zilla-parishod-nirbachon-2প্রায় ক্ষমতাহীন এই পরিষদের নির্বাচনে সরাসরি ভোটের বিধান না থাকায় জনগণের মধ‌্যে তেমন আগ্রহ লক্ষ‌্য করা যায়নি।স্থানীয় সরকারের অন‌্য প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই কেবল ভোট দিয়ে নিজ নিজ জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান এবং ২০ জন সদস্য নির্বাচিত করবেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বর্জনের মধ্যে এ নির্বাচনে ২১ জেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন ইতোমধ্যে। বাকি অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতারাই।

তারপরও নির্দলীয় এ নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কেনাবেচা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। ভোটের আগের দিনও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে আড়াই লাখ টাকাসহ এক সদস্য প্রার্থীর সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

ভোট প্রভাবমুক্ত রাখতে ইসির পক্ষ থেকে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে সাংসদদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। জামালপুরের পুলিশ সুপারকে করা হয়েছে প্রত্যাহার। ভোটার সংখ‌্যা কম হলেও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বড় আয়োজন।

প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি থাকছেন নির্বাহী হাকিমরা। নিয়ম হয়েছে, কোনো ভোটার মোবাইল ফোন বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভেতরে মোবাইল ফোন ব‌্যবহার করতে পারবেন কেবল থানার ওসি।

সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ৬৩ হাজারের কিছু বেশি হলেও এ নির্বাচন আয়োজনে ইসির খরচ হবে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা। সাধারণ জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকছে না বলে বুধবার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি নেই। তবে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

এই নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা তিন হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৪৬, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ এবং

মাগুরা সদর উপজেলা কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রুস্তম আলী।

মাগুরা সদর উপজেলা কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রুস্তম আলী।

সাধারণ সদস্য পদে দুই হাজার ৯৮৬ জন লড়াই করছেন। ৬১টি জেলা পরিষদের ২১টিতে এরই মধ্যে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়াও সংরক্ষিত সদস্য ৬৯ এবং সাধারণ সদস্য ১৬৬ জন ভোটের আগেই বিজয় নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলার চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন আদালতের আদেশে স্থগিত করা হয়েছে।

এ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯১৫টি। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একটি মোবাইল টিম এবং র‌্যাবের একটি মোবাইল টিম কাজ করবে। এ ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ৬১ জেলায় মোট ৯১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

ভোট বৃত্তান্ত

পদ: তিন পার্বত‌্য‌ জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় হচ্ছে এই নির্বাচন। এ নির্বাচনের জন‌্য প্রতিটি জেলার সীমানা ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। তিনটি করে ওয়ার্ড নিয়ে হবে একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ড, যার সদস‌্য হবেন একজন নারী। প্রতিটি জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করা হবে।

ভোটার: ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দেবেন এ নির্বাচনে। মোট ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটারের মধ‌্যে ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন পুরুষ, ১৪ হাজার ৮০০ জন নারী।

প্রার্থী: চেয়ারম্যান পদে ১৪৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৬ জন লড়ছেন। সব মিলিয়ে প্রার্থী সংখ‌্যা ৩ হাজার ৯৩৮ জন। চেয়ারম্যান পদের ব‌্যালট সাদা, সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদের জন‌্য সবুজ এবং নারী সদস্য পদের জন‌্য রয়েছে গোলাপী ব্যালট।

ভোট নিচ্ছেন যারা: এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক। আর তার সহকারী হিসেবে রয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অন‌্য নির্বাচন কর্মকর্তারা।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে এটাই হবে শেষ নির্বাচন। সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের পর জেলা পরিষদেও ভোট করছে এই কমিশন।

২০০০ সালে আইন প্রণয়ন হলেও ১৬ বছর পর হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন। তবে সরাসরি ভোটের বিধান না রাখার সমালোচনাও উঠেছে।

zilla-parishod-nirbachon-1এই নির্বাচন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে ভোট বর্জন করেছে বিএনপি। ‘তামাশার নির্বাচনও’ বলছেন দলটির নেতারা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য মওদুদ আহমেদ একে আইয়ুব খানের ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’র সঙ্গেও তুলনা করেছেন।

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও নির্দলীয় এই নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে। বেশিরভাগ দলের বর্জনের মধ‌্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে স্থানীয় পর্যায়ে পদ-পদবির দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের ভারসাম‌্য আনতে দেখা গেছে এই নির্বাচনে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে প্রার্থী করার পর মনোনয়নপ্রত‌্যাশী অন‌্যজন আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম‌্যান পদে দাঁড় করানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেনের মতো আরও ২০ জেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম‌্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ জন

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন- নারায়ণঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো. আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো. জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো. মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো. লোকমান মৃধা।

তবে বাকি জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হওয়াদের চ‌্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দলটির বিদ্রোহী নেতারা। এর মধ‌্যে পাবনায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মেয়ে।

৩৯ জেলায় চেয়ারম‌্যান পদে ভোটে রয়েছেন ১২৪ জন। এসব জেলার মধ‌্যে অন্তত ৩৭টিতে ক্ষমতাসীন দলের ৭৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বলে তথ‌্য রয়েছে।

এই ভোটের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ২৩ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, ব্যাটালিয়ান আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্য। টহলে থাকবে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা।

ট্যাগ : জেলা, পরিষদ, নির্বাচনে, ভোট, চলছে
x

Check Also

সালমান খান

সালমানের বাড়ির সামনে গুলির দায় স্বীকার করল বিষ্ণোই গ্যাং

এমএনএ বিনোদন ডেস্কঃ বলিউড অভিনেতা সালমান খানের বাড়ির বাইরে রবিবার ভোর ৫টা নাগাদ চার রাউন্ড ...