দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন অব্যাহত
Posted by: News Desk
February 5, 2018
এমএনএ অর্থনীতি রিপোর্ট : সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনের লেনদেনেও দেশের পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় আজ সোমবারও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই আগের দিনের চেয়ে দর হারিয়ে বেচাকেনা হচ্ছে বেশিরভাগ শেয়ার। আর বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতনে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সবগুলো সূচকের অবস্থানও নিম্নমুখী।
আজ সোমবার দিনের লেনদেনের শুরুটা অবশ্য ইতিবাচকভাবেই হয়েছিল। গতকাল রবিবারের ব্যাপক দরপতনের পর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিনের লেনদেন শুরুর পর প্রথম সাত মিনিট পুঁজিবাজারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসই-এক্স’ আগের দিনের চেয়ে ২১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট ওঠে। তবে এরপরই শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় পুনরায় পড়তে শুরু করে দর।
এক পর্যায়ে লেনদেন শুরুর ২২ মিনিট পর সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ডিএসই-এক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১১৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৭১ পয়েন্টে নেমে আসে। সে সময় দর হারিয়ে লেনদেন হচ্ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ শেয়ার।
আজ সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ সে পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা উন্নতি হয়। ওই সময়ে ডিএসই-এক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এ সময় পর্যন্ত লেনদেন হওয়া ৩১৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৬টির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ২৫৫টি। আর আগের দিনের দরে অপরিবর্তিত থেকে বিক্রি হয় ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। উল্লেখিত সময় পর্যন্ত ডিএসইতে ১৭০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মতো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও আজ সোমবার ব্যাপক দরপতন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডিএসইর মতো সিএসইতে আজ সোমবার দিনের শুরুতে সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। তবে তারপরই ফের শুরু হয় দরপতন।
আজ সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সিএসইতে ১৫৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়ে ১২টি, দর কমে ১৪০টি ও আগের দিনের দরে লেনদেন হয় ৭টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এ সময় সিএসই ব্রড ইনডেক্স সিএসই-এক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪১ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৮৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এছাড়া নির্বাচিত কোম্পানিগুলোর সূচক সিএসই ৩০ আগের দিনের চেয়ে ১৭০ পয়েন্ট হারিয়ে ১৬ হাজার ৫১২ পয়েন্টে অবস্থান করছিল।
উল্লেখিত সময় পর্যন্ত সিএসইতে ৭ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়।
এদিকে গতকাল রবিবারের মতো আজ সোমবারও রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারী সংস্থা আইসিবি ব্যাপক পরিমাণে শেয়ার কিনে দরপতন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। গতকাল রবিবার আইসিবি প্রায় ৩২ কোটি টাকা শেয়ার কিনেছিল। তবে তারপরও ঠেকানো যায়নি ব্যাপক দরপতন।
গত সাড়ে ৪ বছরের মধ্যে গতকাল রবিবারই সবচেয়ে বেশি মূল্য সূচকের পতন হয় ঢাকার শেয়ারবাজারে। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৩৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০২টিই দর হারায়, যা লেনদেন হওয়া মোট শেয়ারের প্রায় ৯০ শতাংশ। ব্যাপক এই দরপতনে গতকাল রবিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স একদিনেই ১৩৩ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ৫৮৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে দফায় দফায় দরপতন শুরু হয় গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা তুলে নিতে শেয়ার বিক্রির চাপকে ওই দরপতনের কারণ হিসেবে ভাবা হয়েছিল। পরে অবশ্য জানা যায়, আইনি সীমার অতিরিক্ত আমানত ফেরত দিতে আইসিবিকে বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করতে হচ্ছে মর্মে গুজবই ডিসেম্বরের দরপতনের প্রধান কারণ।
ওই গুজবের রেশ কাটতে না কাটতেই জানুয়ারির শুরুতে ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুদ্রানীতি নিয়ে ভীতি সঞ্চার করে। এতে দরপতন আরও ত্বরান্বিত হয়। এরপর হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গন নিয়ে নানা গুজব দরপতনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
বাজার-সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন, আগের দুটি বিষয়ের আপাত সমাধান হলেও রাজনৈতিক ইস্যুই বর্তমান দরপতনের কারণ।
অব্যাহত দরপতন পুঁজিবাজারে দেশের ব্যাপক 2018-02-05