Don't Miss
Home / সম্পাদকীয় / নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল : কলঙ্কমুক্তির পথে বাংলাদেশ

নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল : কলঙ্কমুক্তির পথে বাংলাদেশ

একাত্তর সালে আলবদর বাহিনী পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেই বাহিনীর প্রধান ছিলেন জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী। ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। এ রায়ে কলঙ্কমুক্তির পথে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।

নিঃসন্দেহে এই রায়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। আর এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তাঁদের স্বজন, পরিবারের সদস্য ও দেশের অগণিত মুক্তিকামী মানুষ। এ নিয়ে আপিল বিভাগ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি মামলায় চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে এটি দ্বিতীয় মৃত্যুদণ্ডের রায়। এখন নিজামীর পক্ষে রায় পুনর্বিবেচনার এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ রয়েছে। এ দুটিতে প্রত্যাখ্যাত হলেই তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ যে তিনটি অপরাধে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সেগুলো হচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যা। এর আগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আরেক জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। নিজামীর আপিলের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রায় ঘোষণার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল হয়েছে।

Nijami-2

অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বরাবরের মতোই আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। আলবদর বাহিনী গঠিত হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি নিজামীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয় তত্কালীন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায়। যাতে বলা হয়, ‘আলবদর একটি নাম, একটি বিস্ময়। আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই আলবদর। যেখানেই দুষ্কৃতকারী সেখানেই আলবদর। ভারতীয় চরদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বিবৃতির মতো করেই মুক্তিকামী মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে এই আলবদর বাহিনী। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে নিজামীর পরিকল্পনায়, নির্দেশে ও নেতৃত্বে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেছে এই কুখ্যাত ঘাতক বাহিনী।

স্বাধীনতার পর মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের বিচারকাজ শুরু হলেও ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান সেই বিচার বন্ধ করে দেন। জেল থেকে মুক্ত করে দেন বহু অপরাধীকে। গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনেন এবং জামায়াতিদের ফের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভের সুযোগ করে দেন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকেই মন্ত্রী বানিয়েছিলেন এবং তাঁদের গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়েছিল। নিজামী শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে চট্টগ্রামে সরকারি স্থাপনা ব্যবহার করে দশ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র আনা হয়েছিল এবং সেই মামলায়ও নিজামীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।

আমরা অবাক হই, যখন দেখি দেশের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়ার পরও স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলটি রায়ের প্রতিবাদে হরতাল ঘোষণা করে। আমরা চাই, জামায়াতে ইসলামীর সব অপতত্পরতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা নিক এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ অব্যাহত রেখে দেশ দ্রুত কলঙ্কমুক্তির পথে এগিয়ে যাক।

-সম্পাদক

x

Check Also

আগস্ট

শোকাবহ আগস্ট মাস ফিরে এলো আবারও

এমএনএ সম্পাদকীয়ঃ জাতির ইতিহাসের কলঙ্কিত এক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল এ মাসে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ...