দেশে সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে যে সংকট বিরাজ করছে, তা আসন্ন রমজানে জনজীবনে লোডশেডিংজনিত দুর্ভোগেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যত কথাই বলা হোক না কেন, বাস্তবতা হল দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ বেশ কম। উদাহরণস্বরূপ, গত রবিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। সে সময় সারা দেশে চাহিদা ছিল ৯ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। বলাবাহুল্য, বেসরকারি হিসাবে এ ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি। ফলে প্রচণ্ড এ গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত, একইসঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সবচেয়ে অন্ধকারে রয়েছে গ্রামীণ জনপদ।
অবশ্য রমজানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর টার্গেট রয়েছে সরকারের। তবে এ লক্ষ্যে যেসব বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত করে চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেগুলোর ওপর কতটা নির্ভর করা চলে তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়। বস্তুত দেশে বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে প্রয়োজন স্থায়ী ব্যবস্থা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জ্বালানি তেলনির্ভর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, তা পরিমাণে অত্যন্ত কম এবং এর উৎপাদন ব্যয় অত্যন্ত বেশি। এ বিদ্যুৎ বাসাবাড়ির লোডশেডিং হয়তো কিছুটা কমাতে সহায়ক হয়েছে, কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকট নিরসন করতে পারেনি। বস্তুত এটি বিদ্যুৎ সমস্যা লাঘবের অস্থায়ী পদক্ষেপ মাত্র। দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতি বছর বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। কাজেই বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে যে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, এ বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। তবে এ ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পের বিকাশের বিষয়টিই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজন অধিক উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎ প্রকল্প। আর বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জ্বালানি হিসেবে কয়লাই ভরসা। কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে যেমন অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, তেমনি এর উৎপাদন ব্যয়ও তুলনামূলক কম। শিল্পায়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িত। তাই দেশের উন্নতি চাইলে, অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি চাইলে, শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি চাইলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প নেই। এ কথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। কয়লাভিত্তিক বড় বড় প্রকল্প গড়ে উঠলে বিদ্যুতের সংকট আর থাকবে না। দেশে কয়লার পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে। কিন্তু কয়লানীতি চূড়ান্ত না হওয়ায় তা উত্তোলনে নেয়া হচ্ছে না পদক্ষেপ। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
-সম্পাদক