Don't Miss
Home / জাতীয় / সারাদেশ / রুইজাতীয় মাছের সঙ্গে পাবদা ও গুলশার মিশ্র চাষ

রুইজাতীয় মাছের সঙ্গে পাবদা ও গুলশার মিশ্র চাষ

এমএনএ ফিচার ডেস্ক : রুইজাতীয় মাছের সঙ্গে পাবদা ও গুলশার মিশ্র চাষ সহজ এবং সুবিধাজনক। বেকারত্ব দূর করতে কম খরচে অত্যাধিক লাভজনক এই মাছ চাষ সম্পর্কে  জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। তিনি জানান, অন্যান্য মাছ চাষের চেয়ে এই মিশ্র মাছ চাষের সুবিধা বেশি। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মোসাম্মৎ সেলিনা হোসেন

এই মাছ চাষের সুবিধা, চাষের পদ্ধতি, মাছের পরিচর্যা, পোনা মজুদ এবং মাছ ধরার সময়সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হলো-

সুবিধাসমূহ
মৌসুমী পুকুর, বার্ষিক পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে এ মাছ চাষ করা যায়। এ মাছ চাষে পুকুরের সব স্তরের খাবারের ব্যবহার নিশ্চিত হয়। ৫-৬ মাসের মধ্যেই কয়েক ধরনের রুইজাতীয় মাছের পাশাপাশি পাবদা ও গুলশা মাছ বাজারজাত করা যায়। শুধু রুইজাতীয় মাছ চাষের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। পাবদা ও গুলশা মাছ সুস্বাদু, তাই বাজার মূল্য অনেক বেশি।

পুকুর প্রস্তুত
শুকনো মৌসুমে পুকুর থেকে জলজ আগাছা পরিষ্কার ও পাড় মেরামত করতে হবে। ছোট মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর শুকানো উচিত নয়। তাই বার বার ঘন ফাঁসের জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণি অপসারণ করতে হবে। প্রতি শতকে ১ কেজি পাথুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে চুনের মাত্রা কম-বেশি হয়ে থাকে। পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মানোর জন্য পোনা ছাড়ার আগে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি শতকে ৪-৬ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করা ভালো। পানির রং সবুজ বা বাদামি সবুজ হলে পোনা ছাড়ার উপযুক্ত হয়।

পোনা মজুদ
পুকুরে মাছ চাষের সফলতা নির্ভর করে ভালো জাতের সুস্থ, সবল ও সঠিক প্রজাতির পোনা সঠিক সংখ্যায় মজুদের ওপর। পুকুরে পোনা ছাড়ার আগে পরিবহনকৃত পোনা পুকুরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ (৫ গ্রাম) পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে তাতে ১-২ মিনিট গোসল করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

নিম্নের ছকে বর্ণিত যে কোনো একটি নমুনা অনুযায়ী ১০-১২ সেন্টিমিটার আকারের রুইজাতীয় মাছ ও ৫-৭ সেন্টিমিটার আকারের পাবদা বা গুলশা মাছের সুস্থ সবল পোনা মজুদ করতে হবে।

কার্প-পাবদা মডেল– ১ এর জন্য মাছের প্রজাতি ও সংখ্যা হচ্ছে কাতলা-১২, রুই-৮, মৃগেল-৮, গ্রাসকার্প-২, পাবদা-৭০, মোট-১০০টি।

কার্প-পাবদা মডেল– ২ এর জন্য মাছের প্রজাতি ও সংখ্যা হচ্ছে সিলভার কার্প-৮, কাতলা-৪, মৃগেল-৮, গ্রাসকার্প-২, সরপুটি-৮, পাবদা-৭০, মোট-১০০টি।

কার্প-পাবদা-গুলশা মডেলের জন্য মাছের প্রজাতি ও সংখ্যা হচ্ছে কাতলা-৮, রুই-১০, মৃগেল-১০, গ্রাসকার্প-২, পাবদা- ৫০, গুলশা-৫০, মোট-১৩০টি।

মজুদ পরবর্তী পরিচর্যা
পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক খাদ্য রাখার জন্য দৈনিক বা ৭-১৫ দিন পরপর নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হয়। সাধারণ নিয়মানুসারে দৈনিক শতক প্রতি ১৫০ গ্রাম গোবর অথবা ৩০০ গ্রাম কম্পোস্ট, ৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫ গ্রাম টিএসপি একটি পাত্রে পানির সঙ্গে ১ দিন ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকাল ১০-১১টায় পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

অথবা ৭ দিন বা ১০ দিন পরপর সার ব্যবহার করতে হলে উপরোক্ত পরিমাণে দিনের গুণিতক হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতিদিন সার ব্যবহার করাই সর্বোৎকৃষ্ট। জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে পরিমাণমতো ও নিয়মিত ব্যবহার করলে বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়।

সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ
কার্প-পাবদা-গুলশার মিশ্র চাষে সম্পূরক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান শতকরা মিশ্রণের হার- চালের মিহি কুড়া-৪০, গমের ভুসি-২০, সরিষার খৈল-২০, ফিশমিল-২০, মোট-১০০। ১০-১২ ঘণ্টা ভেজানো সরিষার খৈলের সঙ্গে শুকনো গমের ভুসি বা চালের মিহি কুড়া মিশিয়ে গোলাকার বল তৈরি করতে হবে।

পুকুরে মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের শতকরা ৩-৫ ভাগ হারে দৈনিক খাবার দিতে হবে। শীতকালে খাবারের পরিমাণ শতকরা ১-২ ভাগ হারে সরবরাহ করতে হবে। বরাদ্দকৃত খাবার দিনে ২ বার প্রয়োগ করা ভালো। মাসিক নমুনায়নের মাধ্যমে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বাণিজ্যিক পিলেট খাবারও মাছকে সরবরাহ করা যেতে পারে।

সতর্কতা
পুকুরের তলদেশে কাদা থাকলে গ্যাস জমে থাকতে পারে। দড়ির সঙ্গে লোহা বা মাটির কাঠি কিংবা ইট বেঁধে হররা তৈরি করে পুকুরের তলঘেঁষে আস্তে আস্তে টেনে তলার গ্যাস বের করে দিতে হবে। প্রতি মাসে একবার কিছু মাছ ধরে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পুকুরে পানি কমে গেলে পানি সরবরাহ করতে হবে। পানি বেশি সবুজ হয়ে গেলে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

আংশিক আহরণ
রুইজাতীয় সব মাছ ও পাবদা-গুলশা মাছের বৃদ্ধির হার সমান নয়। বেশি লাভের জন্য বড় মাছ আহরণ করে ছোট মাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাই রুইজাতীয় যে মাছগুলো ৫০০-৭০০ গ্রামের উপরে হবে তা আহরণ করে সমসংখ্যক পোনা ছাড়তে হয়।

চূড়ান্ত আহরণ
বছর শেষে সব মাছ আহরণ করে ফেলতে হবে। বাজার দর এবং পরবর্তী ফসলের জন্য পোনা প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে চূড়ান্ত আহরণের সময়কাল ঠিক করতে হবে। পাবদা ও গুলশা মাছ ৮-৯ মাস চাষে যথাক্রমে ২৫-৩০ গ্রাম ও ৪৫-৫০ গ্রাম ওজনের হয় এবং তা বিক্রির উপযুক্ত হয়।

পরামর্শ
আগ্রহীরা বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিজ নিজ উপজেলা ও জেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

x

Check Also

বাঞ্ছারামপুর

তরুনলীগের উদ্যোগে বাঞ্চারামপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন

এমএনএ সারাদেশ ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখার উদ্যেগে ...