কঠোর আইন থাকার পরও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছে না। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রায় প্রতি নিয়তই খবরের শিরোনাম হয়ে আসছে নিরাপরাধ শিশুরাই। কোন ভাবেই যেনো শিশু নির্যাতন থামছে না। এ ব্যধির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সর্বাগ্রে প্রশাসনিক ও সামাজিক নিষ্ক্রিয়তা নয়, বরং সমন্বিত প্রতিরোধ চাই।
গত বছর চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যার একাধিক ঘটনার পর কয়েকটি মামলায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। তবে থেমে নেই অপরাধ। ঠুনকো বা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে কিছু কিছু মানুষ শিশুদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এই নিপীড়নকারীরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শিশুদের হত্যা পর্যন্ত করছে। গতকালই জাতীয় পত্রিকাসমূহের এক খবরে দেখা যায়, নাটোরে চুরিচেষ্টার অভিযোগ এনে তিন শিশুকে রশি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে লাঠিপেটা করা হয়েছে। উপরন্তু তাদের জরিমানা করা হয়েছে। সন্দেহবশত আটক শিশুদের বিচারে সালিস ডেকে এই নির্যাতন চালায় স্থানীয় এক বাজার পরিচালনা কমিটি। এ ধরনের আচরণ শিশু ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
দেখা গেছে, আমাদের দেশে শিশুদের বিরুদ্ধে আনা এ ধরনের অভিযোগের বড় একটি অংশই বিভ্রান্তিকর অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যাচারে আক্রান্ত। এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বোঝা উচিত, শিশুরা একটি জাতির ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি। শিশুদের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে জাতিরও বড় ক্ষতি হয়। শিশুদের প্রতি ঘৃণ্য অপরাধ রোধে সামাজিক সক্রিয়তাও দৃশ্যমান নয়। এমনও দেখা যায়, মানুষ বিনা প্রতিবাদে নির্যাতনের দৃশ্য দেখে যায়। পুলিশের কাছে ছোট্ট একটি ফোন কলও তো প্রকাশ্যে হত্যা বা নির্যাতন থেকে একজনকে রক্ষা করতে পারে!
আমাদের মনে রাখা উচিত, এ ধরনের অন্যায় নীরবে মেনে নেওয়া অন্যায় করারই শামিল। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একটু সচেতন হলেই সালিসের নামে নিপীড়নের ঘটনা কমে আসবে। অনেক সময় পুলিশও অভিযোগ পাওয়ার পর তাত্ক্ষণিক ঘটনাস্থলে আসে না। উদাসীনতা বা নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি অপরাধীদের সঙ্গে সখ্য থাকারও অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেই দায়িত্ব পালনে অনীহা থাকলে সাধারণ মানুষ যেমন হতাশ হয়ে পড়ে, অপরাধীরাও হয়ে ওঠে বেপরোয়া। নাটোরের বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি বলেছেন, অভিযোগ পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পত্রিকায় নির্যাতনের যে ছবি ছাপা হয়েছে তাতেই অপরাধ সংঘটন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি স্পষ্ট। তাহলে অভিযোগ পাওয়ার আশায় তারা বসে থাকবে কেন?
আমরা মনে করি, এ-জাতীয় অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসনের সততা বা আন্তরিকতার অভাব প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। মানবিক, কল্যাণমূলক ও নিরাপদ সমাজ নিশ্চিত না করা গেলে শিশুহত্যা বা নির্যাতন যেমন বন্ধ হবে না, এ জন্য দেশ ও জাতিকেও বড় মূল্য দিতে হবে।
-সম্পাদক