Don't Miss
Home / হোম স্লাইডার / শেরে বাংলার ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শেরে বাংলার ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

এমএনএ রিপোর্ট : অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের মহান নেতা শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬২ সালের এই দিনে এ মহান নেতার মৃত্যু হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে।

শেরে বাংলা ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন।

বিশ শতকের প্রথমার্ধে বাঙালি কূটনীতিক হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে ‘শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ)’ এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যার অবদান আজো অবিস্মরণীয়, আজো যাকে জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে- তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।

অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার কারণে আগামী প্রজন্মের জন্য তিনি অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন।

১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল শুক্রবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২৮ এপ্রিল তার মরদেহ ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় তার ২৭ কে. এম. দাস লেনের বাসায় রাখা হয়। ঢাকার পল্টন ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে সমাহিত করা হয়। একই স্থানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর রয়েছে। তাদের তিনজনের সমাধিস্থলই আজ ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার নামে পরিচিত। রেডিও পাকিস্তান সেদিন সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে সারাদিন কোরআন পাঠ করে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে তার প্রতি সম্মান দেখানো হয়। ৩০ এপ্রিল সোমবার পাকিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এতেই স্পষ্ট যে তিনি কতো বড় মাপের নেতা ছিলেন। যা আজ বাংলাদেশের মানুষের জন্য গর্ব ও অহংকারের।

স্বাধীনতার চেতনা ও গণতান্ত্রিকতাবোধ সৃষ্টিতে তার অসামান্য অবদানের কথা এদেশের মানুষের মন থেকে কোনদিনই বিস্মৃত হবে না।

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ছিল বিশাল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল তার। ছিলেন বাঙালী মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। জাতি হিসেবে আমরা যে সবাই বাঙালি এই ঐতিহাসিক সত্যের মূল ভিত্তি তিনিই রচনা করেছিলেন। একমাত্র প্রেসিডেন্টের পদটি ছাড়া সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল না, যা তিনি অলঙ্কৃত করেননি। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ফজলুল হক এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, রাজনীতি, সমাজ সংস্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

বিপুল ঐশ্বর্যশালী পিতার একমাত্র সন্তান হয়েও ফজলুল হক বাল্যকাল থেকেই বহু সদগুণের অধিকারী ছিলেন। তেমনি শৃঙ্খলা ও আদর্শের প্রতি অনুরক্ত, বাল্যকাল থেকেই তেজস্বিতা, তীক্ষ্ণ মেধা ও প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় তার। কর্মজীবনেও ছিলেন উজ্জল। আইনজীবী হিসেবে তার কলকাতা হাইকোর্টে কর্মজীবন শুরু।

১৯০০ সালে তিনি ওকালতিতে যোগদান করেন এবং ১৯০১ সালে তিনি বরিশালে ফিরে আসেন। ১৯০৬ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্টেটের চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯১১ সালে আবার আইন ব্যবসায়ে নেমে পড়েন। ১৯১২ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯২৪ সালে অবিভক্ত বাংলা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন। ১৯২৮ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি ও নিখিল ভারত জাতীয় কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে তার কৃষক প্রজা পার্টি ৩৯টি আসন ও মুসলিম লীগ ৩৮ টি আসন লাভ করে। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেন।

১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে জ্বালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন। এই লাহোর প্রস্তাবই “পাকিস্তান প্রস্তাব” হিসেবে পরবর্তীকালে আখ্যায়িত হয়। তার বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে পাঞ্জাববাসীরা তাঁকে উপাধি দেয় শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘ। সে থেকেই তিনি শেরে বাংলা।

এ কে এম ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তিনি ছিলেন মুসলিম জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়ক। আবার অন্যদিকে ছিলেন বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক বাহক।

একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ হিসেবে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কূটনীতিক ও রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন বাংলার বাঘ এবং হক সাহেব। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও তিনি কলকাতার মেয়র, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর এবং পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকালে মরহুমের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও তার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপও সকালে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করে। এছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গবেষণা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

x

Check Also

এমভি আবদুল্লাহ

২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ এক মাস পর মুক্ত

এমএনএ জাতীয় ডেস্কঃ দীর্ঘ একমাস বন্দিদশার পরে অবশেষে মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়া ...