Don't Miss
Home / জানা-অজানা / সাগর শুকিয়ে হয়ে গেল লবণের মরুভুমি!

সাগর শুকিয়ে হয়ে গেল লবণের মরুভুমি!

এমএনএ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে মধ্যভাগে অবস্থিত প্রাচীন সাগরের অবশিষ্টাংশ একটি লেক এখন লবণের মরুভুমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে। এখন শুধু লেকটির একেবারে দক্ষিণ কোনে সামান্য লাল পানি ছাড়া আর কোনো পানি নাই।
লেক পুপো (Lake Poopó) নামে বলিভিয়ার ওই হ্রদটিই একসময় বলিভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পানির আধার ছিল। কিন্তু এখন লেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞস করলে স্থানীয়রা ভ্রমণকারীদেরকে ‘সাবেক লেক’, যা এখন লবণাক্ত ‘সমতল ভুমি’ বলে শুধরে দেন।
ওই লেকটিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠী উরুস-মুরাটোসরা। যারা এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন লেকটি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন আর সেখানে তাদের কোনো ভবিষ্যত নেই। ফলে তারা তাদের সন্তানদেরকে জেলের পেশায় নিয়োগ না করে বরং স্কুল-কলেজে পাঠাতে চান।
লেকটি একসময় ২০০ প্রজাতির পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং মাছের অভয়ারণ্য ছিল। আগেও লেকটি খরার মৌসুমে ছোট হয়ে আসত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খরার মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় লেকটি শুকিয়ে যেতে থাকে।
২০১৪ সালের নভেম্বরে হঠাৎ করেই লাখ লাখ মাছ এবং পাখি মরে যেতে থাকে। ২০১৫ সালের শেষদিকে লেকটি প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে আসে। এক সময় এর আয়তন ছিল ২,৪০০ বর্গকিলোমিটার। মনে হচ্ছে লেকটি চিরদিনের জন্যই পুরোপুরি শুকিয়ে গেল। অনেকেরই দাবি, তাপমাত্রা বেড়ে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল হিসেবেই এই বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এখনে লেকটির বুকে সাদা লবণের আস্তরাণের মাঝে মাছ ধরার নৌকাগুলো মুখ গুঁজে আছে।

00

লেকটির মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত উরুস-মুরাটোস নামের যে আদিবাসী জনগোষ্ঠী তারা এখন কৃষি কাজ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। অথচ তারা আগে কখনোই কৃষি কাজ করেননি। তারা এখন প্রতিবেশী আমায়রা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গিয়ে কৃষি কাজ করছেন। যেখানে তারা প্রায়ই বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। ফলে তাদের ওপর দারিদ্র চেপে বসেছে।
অনেকে আবার পাশের শহরে চলে গেছেন। যেখানে তারা দিনমজুরির কাজ করছেন। অনেকে আবার বেশ সাফল্যও পাচ্ছেন এবং বৃহত্তর উরু-চিপায়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতির পনরুত্থিত যোগাযোগের কথা বলছেন।
কিন্তু বাকীরা অন্য কোথাও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। লেকটি ঘিরে এখন মাত্র ৮০০ জন উরুস মোরাটোস জনগোষ্ঠীর সদস্য বাস করেন। যারা এখনো মধু মাছ ধরেই বেঁছে আছেন। তবে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন সমাজের একটি এই জনগোষ্ঠী হয়তো একদিন পুরোপুরি নাই হয়ে যেতে পারে। বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী।
ভ্যাঙ্কুভার ভিত্তিক নৃবিজ্ঞানী ক্লেইটন হুইট বলেন, ‘লেকটি মরে যাওয়ায় ওই অঞ্চলের লোকদের ভবিষ্যত মারা পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করলেও গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
লেকটির দক্ষিণ পাশের একটি পরিবার জানান, তারা এখন কোলচানি শহরে গিয়ে লবণ সংগ্রহ করার কাজ করেন। স্ত্রী ও কন্যা সহ তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে কোনো মতো বেঁচে আছেনে বলে জানান ৪২ বছর বয়সী পরিবার প্রধান অরেলিয়ানো মরিসিও ভ্যালেরো। তিনি জানান প্রতিদিন আমরা ৫ হাজার ব্যাগ লবণ ভরে মাত্র ১২৫ বলিভিয়ানো বা ১৪ পাউন্ড পাই। ছোটোবেলায় আমরা এখানে মাছ ধরেছি। কিন্তু লেকটি শুকিয়ে যাওয়ায় আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি। লেকটি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তারা ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে লবণ শিল্পের শহর বলে খ্যাত কোলচানি শহরে চলে গেছেন।
x

Check Also

অস্ট্রেলিয়ায় এক প্যাকেট সিগারেট ৩০০০ টাকা!

এমএনএ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : সিগারেটের দাম আরও বাড়াতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ ...