Don't Miss
Home / ইসলাম ও জীবন / ইসলামি বিধান / বিশেষ দিন ও রাত / কোরবানির ঈদ আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

কোরবানির ঈদ আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

এমএনএ ফিচার ডেস্ক : কোরবানির ঈদ মুসলমানদের একটি দ্বীনি উৎসব। একটি আনন্দমুখর ইবাদত। যার সাথে মিশে আছে আত্মত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও নিজকে উৎসর্গ করার মানসিকতা। কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে থাকে প্রেম, ভালোবাসা, আল্লাহভীরুতা এবং নেক উদ্দেশ্য।

কোরবানি মূলত পশু কোরবানি নয় বরং কোরবানি হলো আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাঁর প্রিয় বান্দাহ মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম। তার ধারাবাহিকতাই হচ্ছে কুরবানি। কোরবানির প্রকৃত অর্থ আত্মার পরিশুদ্ধি, আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার মানসিকতা সৃষ্টি। জান-মাল যে কোনো ক্ষেত্রে নিজেকে আল্লাহর রাহে সঁপে দেয়ার মানসিক প্রস্তুতিই হলো কোরবানি। সচ্ছল-অসচ্ছল সকল অবস্থা্য় নিজেকে আল্লাহর সামনে সমর্পণ করতে পারলেই কোরবানির আসল রূপ ফুটে উঠবে। অন্যথায় পশু জবেহ করার মাধ্যমে শুধু অর্জিত হবে প্রদর্শনেচ্ছা।

ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে কোরবানির মাধ্যমে আত্মত্যাগের যে মহান আদর্শ  রেখে গেছেন সে অনুপম দৃষ্টান্তকে অব্যাহত রেখে আল্লাহর প্রেমের চেতনাকে জাগরুক রাখার জন্য মুসলিম উম্মাহ কোরবানির উৎসবের  মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পণের অতুলনীয় উৎসব পালন করে। যা প্রতিটি মুসলমানকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইব্রাহিম-ইসমাঈল আলাইহিমুস সালাম এর মতো যে কোন ধরনের ত্যাগ স্বীকারের প্রেরণা জোগায়।

ত্যাগের মাধ্যমেও আনন্দ লাভ করা যায় এটাই কোরবানির ঈদের শিক্ষা। কেউ আনন্দ পায় পরকে ঠকিয়ে, আর কেউ আনন্দ পায় নিজকে অপরের জন্য বিলীন করে দিয়ে। এমনই ঘটনা ঘটেছে কোরবানির ঈদের ইতিহাসে। মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও পুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালাম আনন্দ পেয়েছেন মহান আল্লাহর রাহে নিজেদের বিলীন করে দিয়ে। আল্লাহর পরীক্ষায় ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আত্মত্যাগ বিসর্জন দিয়ে সকল সময় বিজয়ী হযেছেন। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম স্বীয় রবের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছেন, তাঁর বিবিকে বনবাসে পাঠিয়েছেন এমন কি বৃদ্ধ বয়সে প্রাপ্ত অতি আদরের সন্তানকে আল্লাহর রাহে কোরবানি দিতেও দিধাবোধ করেননি। তাঁর এ ত্যাগ কবুল করেছেন আল্লাহতায়ালা। ফলে তিনি হয়েছেন মুসলিম জাতির পিতা। যুগ যুগ ধরে এ ঘটনা  লেখা থাকবে ইতিহাসের সোনালী পাতায়। আর এসব স্মরণ করতে থাকবে মুসলিম জাতি। ইব্রাহিম ও ইসমাঈল আলাইহিমুস সালাম এর আত্মত্যাগই আজ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে ঈদুল আযহা উদযাপন করতে ও কোরবানি দিতে।

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রতিবছর আমাদের মাঝে ঈদ আগমন করে। এবারও ঈদ সমাগত। যে ঈদ উদ্দীপনা জোগায় আনন্দ-ফুর্তির মুহুর্তেও গরিব-দুঃখী, অসহায় মানুষগুলোকে কাছে টেনে নেয়ার। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, ‘‘অতঃপর তোমরা তা থেকে নিজেরা খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে খেতে দাও।’’ (সূরা হাজ্জ :২৮)

কোরবানির মহান ইবাদাতকে আল্লাহ রাববুল আলামীন গরিব, দুঃখী, অভাবক্লিষ্ট মানুষ তথা আর্ত মানবতার সাথে জড়িয়ে দিয়েছেন। যে কোরবানির পশুর চামড়া বা তার বিক্রিত অর্থ কোরবানি দাতার খাবার বিধান নেই, যে কোরবানির পশুর চামড়া বা গোশত গরিব দুঃখীকে মজুরি হিসেবে দেয়া যাবে না, দিতে হবে উপঢৌকন হিসেবে। আজ অনেকে সে কোরবানির গোশত বছরব্যাপী খাওয়ার জন্য শোরুমের বড় ফ্রিজটি কোরবানির ঈদ আসার আগেই ক্রয় করে থাকেন। কোরবানির গোশত গরিব-দুঃখীদের না দিয়ে ফ্রিজ ভর্তি করেন যা কোরবানির ঈদের শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক।

আল্লাহ রাববুল আলামিন বলেন, ‘‘অতঃপর (জবাই শেষে) তা যখন একদিকে পড়ে যায় তখন তোমরা তার (গোশত) থেকে নিজেরা খাও, যারা এমনিই (আল্লাহর রিযিকে) সন্তুষ্ট আছে তাদের এবং যারা (তোমার কাছে) সাহায্যপ্রার্থী হয়, এদের সবাইকে খাওয়াও, এভাবেই আমি এদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা (এ জন্যে) আল্লাহতায়ালার শোকর আদায় করতে পারো। আল্লাহতায়ালার কাছে কখনো (কোরবানির) গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই পৌঁছায়। (সূরা হাজ্জ : ৩৬-৩৭)

পশু জবেহ ও তার গোশত ভক্ষণ, কোরবানির পশু কোনটা মোটা, কোনটা সরু- আল্লাহ তা দেখেন না। আল্লাহ দেখেন তার বান্দার অন্তরে তাকওয়া আছে কি না।  তবে তাকওয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হবে। সে প্রতিযোগিতা সামর্থের আলোকে সবচেয়ে মোটা-তাজা পশু কোরবানির মাধ্যমেও হতে পারে, হতে পারে গরিব দুঃখীদের মাঝে  বেশি বেশি কোরবানির গোশত বিতরনের মাধ্যমেও। আর সামর্থ থাকার পরও যারা কোরবানি করে না, তাদের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সামর্থ্য থাকতে যারা কোরবানি করে না তারা যেন আমার ঈদগাহের কাছেও না আসে।’’

মূলত সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর কোরবানির দিন আল্লাহর নামে পশু জবেহ করা ওয়াজিব। পশু কোরবানি মূলত নিজের নফস তথা কুপ্রবৃত্তিকে কোরবানি করার প্রতীক। এ কোরবানি সকল প্রকার লোভ-লালসা, পার্থিব স্বার্থপরতা ও ইন্দ্রিয় কামনা বাসনার মৌলিক আবিলতা হতে মুক্ত ও পবিত্র হয়ে মহান রবের প্রতি নিবেদিত বান্দা হওয়ার প্রেরণা যোগায়। প্রেরণা যোগায় সত্য ও হকের স্বপক্ষে আত্মোৎসর্গের। প্রেরণা যোগায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহুর্তে মহান প্রভুর নিরঙ্কুশ আনুগত্য ও নির্দেশ পালনের।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে লক্ষ করা যায় অনেকেই নাম প্রকাশ করার জন্যে  বেশি দামে পশু ক্রয় করে পত্রিকার পাতায় ফলাও করে প্রচার করে। যা সম্পূর্ণ অনুচিত। প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একমাত্র তাঁরই নামে ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করা। আর  ঘোষণা করা, ‘‘হে আল্লাহ আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবই তোমারই জন্য।’’

x

Check Also

পবিত্র আশুরার ইতিহাস-শিক্ষা এবং রোজা পালনের ফজিলত

এমএনএ ফিচার ডেস্ক : হাদিসে পবিত্র ‘আশুরার’ ইতিহাস-শিক্ষা এবং রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ...