Don't Miss
Home / হোম স্লাইডার / অভিনেত্রী থেকে জননেত্রী জয়ললিতা

অভিনেত্রী থেকে জননেত্রী জয়ললিতা

এমএনএ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : অভিনেত্রী থেকে জননেত্রী হয়ে উঠা তামিলনাড়ু রাজ্যের পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জয়ললিতা জয়রাম গতকাল সোমবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন।

৬৮ বছর বয়সী জয়ললিতা জয়রাম ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুতে রাজ্যজুড়ে শোক নেমে আসে।

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রামের মৃত্যুতে রাজ্যে সাত দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার এই শোক ঘোষণা করে।

joy-lalita-1প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শোক চলাকালে রাজ্যের সব সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজ্য সরকার তামিলনাড়ুর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে।

জয়ললিতা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্য তামিলনাড়ু শাসন করেছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নিতেন মাত্র ১ টাকা।

চলচ্চিত্রের নায়িকা থেকে হয়ে উঠেছিলেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। রিল লাইফের সুন্দরী নায়িকা থেকে রিয়েল লাইফে ৬ বার মুখ্যমন্ত্রী। বিতর্ক এবং জনপ্রিয়তা- এ দু’টো বিষয় জয়ললিতার পাশাপাশি হেঁটেছে। মানুষের আশীর্বাদে রাজনীতির লড়াইয়ে বার বার জয়ী হলেও জীবনের লড়াইয়ে হার মানতে হলো তাকে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ারাম জয়ললিতার জীবনাবসানে শেষ হল দ্রাবিড় রাজনীতির এক বর্ণময় অধ্যায়।

সাদামাটা জীবনযাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়া জয়ললিতা তামিলনাড়ুবাসীর কাছে ‘আম্মা’ নামে পরিচিত ছিলেন।

জয়ললিতা কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো :

মায়ের হাত ধরে চলচ্চিত্রে

মাত্র তিন বছর বয়স থেকে ভরতনাট্যমে তালিম নিয়েছেন তিনি। স্কুল-টপার ছিলেন জয়ললিতা। দশম শ্রেণিতে জিতেছিলেন গোল্ড স্টেট অ্যাওয়ার্ড। জয়ললিতার মা নাট্যদল কর্মী এবং তামিল ছবির অভিনেত্রী ছিলেন। মায়ের হাত ধরে শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন জয়ললিতা। এরপর ১৫ বছর বয়সে ‘ চিন্নাডা গোম্বে’ চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। নিজের প্রথম ছবি নিজেই দেখতে পাননি জয়ললিতা। কারণ তা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছিল। তিনিই প্রথম তামিল অভিনেত্রী হিসেবে স্লিভলেস ব্লাউজ পরে সিনেমার পর্দায় আসেন।

joy-lalita-8সঙ্গীত-নৃত্যে পারদর্শী

জয়ললিতা শুধু অভিনয়েই তার প্রতিভার ঝলক দেখাননি। তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়াও ভরতনাট্যম, মোহিনীআট্যম, মণিপুরী এবং কত্থক নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন। পিয়ানোর উপরও ভালো দখল ছিল তার।

প্রেম এবং ভালবাসা
সিনেমায় অভিনয় করাকালীন বিবাহিত অভিনেতা শোবান বাবুর প্রেমে পড়েন জয়া। কিন্তু দু’জনে কখনও বিয়ে করেননি। ইংরাজি সাহিত্য পড়তে ভালবাসতেন তামিলনাড়ুর ‘আম্মা’। যেখানে যেতেন বই সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

পুরাতচি থালাইভা

জয়ললিতার আরেকটি নাম ছিল পুরাতচি থালাইভা। তবে নিকট আত্মীয় এবং সহ-অভিনেতারা তাকে ‘আম্মা’ নামে ডাকতেন। কারণ লড়াই করেই তামিলনাড়ুর মসনদে বসেছিলেন জয়ললিতা।

নায়ক-নায়িকা উভয়েই মুখ্যমন্ত্রী

জয়লললিতা ‘আইরাথিল ওরুভান’ চলচ্চিত্রে এম জি রামচন্দ্রণের বিপরীতে অভিনয় করেন। রামাচন্দ্রন রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরে তার হাত ধরেই জয়ললিতা রাজনীতিতে যোগ দেন। রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীর সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন জয়াললিতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ললিতাকেই তার দল এআইডিএমকের নেতা-কর্মীরা অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে মেনে নেয়।

এরপর একই দল থেকে পাঁচবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন জয়ললিতা। ১৯৯১ সালে প্রথম তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জয়ললিতা। রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি একজন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জয়ললিতার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ যেমন উঠেছে তেমনি দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন।

joy-lalita-6জয়ললিতা একবার বলেছিলেন, ‘কখনও আমি নিজের আবেগ প্রকাশ্যে দেখাই না। সবার সামনে কখনো রেগে যাইনি বা কাঁদিনি। অথচ রাজনীতিতে আসার আগে আমি এমন ছিলাম না। খুব লাজুক ছিলাম। অপরিচিতদের সামনে আসতে চাইতাম না। আমার কাজ দেখে মানুষ আমাকে খুব কড়া স্বভাবের মনে করে। তবে আমি কখনও ইচ্ছা করে কড়া হতে চাই নি।’

আঞ্চলিক রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করলেও জাতীয় প্রেক্ষাপটে জয়ললিতার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বহুবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জয়ললিতার সমর্থনে টিকে ছিল। তামিলনাডু বিধানসভাতেও বিরোধী দলকে রীতিমতো দাবিয়ে রাখতেন জয়ললিতা।

১২০টি ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র

১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে দক্ষিণ ভারতের ডাকসাইটে অভিনেত্রী ছিলেন জয়ললিতা। ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তামিল, তেলেগু এবং কানাড়া ভাষায় বহু দর্শকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের চলচ্চিত্রের নায়কদের রাজনীতিতে আসার উদাহরণ আছে। কিন্তু সিনেমার নায়িকারা যে রাজনীতিতে এসে সফল হতে পারেন, জয়াললিতা তার উদাহরণ। জয়ললিতা ১৪০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে ১২০টিই ছিল ব্লকবাস্টার হিট।

জয়ললিতা তার সুবর্ণ সময়ে অভিনয় জীবনের শিখরে ছিলেন। তার অভিনীত সব চলচ্চিত্রই ছিল নারী প্রধান। ওই সময় তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেতেন।

শাড়ির ছেঁড়ায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রতিজ্ঞা

১৯৮৯ সালে বিধানসভায় নির্বাচনে তামিলনাড়ুর প্রথম বিরোধী নারী নেত্রী হিসেবে আবির্ভূত হন জয়ললিতা। ওই সময় বিধানসভার ভেতরে হেনস্থার শিকার হন তিনি। ছেঁড়া শাড়ি এবং এলো চুলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রতিজ্ঞার কথা জানান।

joy-lalita-7সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী

জয়ললিতার মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীনের প্রতিজ্ঞা পূরণ হতে বেশি সময় লাগেনি। দুই বছরের মাথায় ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর প্রথম নারী এবং সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।

দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া

২০১৪ সালে কর্ণাটকের একটি বিশেষ আদালত তার আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পদ অর্জনের পুরনো একটি দুর্নীতির মামলায় তাকে চার বছরের সাজা দেয়। ভারতের কোন ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রীর জেলে যাওয়ার ঘটনা সেটাই ছিল প্রথম। কিন্তু তামিলনাডুতে জয়ললিতার জনপ্রিয়তায় কোন চিড় ধরেনি। গরীবদের ঘরে-ঘরে রঙিন টেলিভিশন, মিক্সার গ্রাইন্ডার মেশিন দেবার প্রকল্প এবং সস্তায় খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

ছেলের বিয়ে, রেকর্ড এবং হার

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে জয়ললিতার জনপ্রিয়তা প্রবাদপ্রতীম। কিন্তু ‘আম্মা’ হিসেবে খ্যাত এই নেত্রীও এক পর্যায়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং এ জন্য নির্বাচনে হারেরও মুখোমুখি হন।

জয়ললিতা পালিত ছেলে সুধাগরনের বিয়েথে ১০ কোটি টাকা খরচ করে দেড় লাখের বেশি অতিথিকে খাওয়ান। এ বিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়।

কিন্তু এই বিলাসবহুল বিয়ে ‘আম্মা’ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দেয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি করে অর্থবিত্ত করার অভিযোগ ওঠে। যার প্রভাবে ১৯৯৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান তিনি।

তামিল ভাষায় স্বচ্ছন্দ্য

তামিল অভিনেত্রী হিসেবে তার ঝুলিতেই সবচেয়ে বেশি সিলভার জুবিলি সিনেমার রেকর্ড। তামিল ভাষাতেও স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন তিনি। এ ভাষায় বইও বেরিয়েছে তার। নিয়মিত লেখক ছিলেন ‘থাই’ নামের তামিল সাপ্তাহিকে। তার প্রয়াণে ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে বর্ণময় ও প্রভাবশালী একটি চরিত্রের বিদায় হলো।

ট্যাগ : অভিনেত্রী, থেকে, জননেত্রী, জয়ললিতার, চিরবিদায়
x

Check Also

২৬ মার্চ

আজ ২৬ মার্চ – মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

এমএনএ ফিচার ডেস্কঃ আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির ইতিহাসে গৌরবময় একদিন। ...