Don't Miss
Home / ইসলাম ও জীবন / জীবন চরিত / নবী-রাসুল / প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষমা ও উদারতা

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষমা ও উদারতা

এমএনএ ফিচার ডেস্ক : আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ হলো ক্ষমা ও উদারতা। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনেও রয়েছে ক্ষমা ও উদারতার অসংখ্য উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের পর প্রিয়নবি মায়া-মমতা, ক্ষমা ও উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

মক্কা বিজয়ের পর তিনি বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অথচ তাদের চরম অত্যাচার নির্যাতনে তাঁর সঙ্গী-সাথীসহ জীবন বাঁচাতে তিনি পবিত্র নগরী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।

কুরআনে পাকে ক্ষমা ও উদারতা প্রসঙ্গে রয়েছে অনেক দিক নির্দেশনা। ক্ষমা ও উদারতা যেমন আল্লাহ তাআলার গুণ, আবার এগুলোকে নবি-রাসুলদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলেও কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

যারা নবি-রাসুলদের অনুসরণ করবে তারাও ক্ষমা এবং উদারতার বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব আপনি ধৈর্যধারণ করুন, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাসুলগণ। (সুরা আহকাফ : আয়াত ৩৫)

কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো ক্ষমা ও দয়ার গুণে গুণাম্বিত হওয়া। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, ‘আর তোমরা যদি ওদেরকে মার্জনা কর, ওদের দোষত্রুটি উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর; তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। (সুরা তাগাবুন : আয়াত ১৪)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষকে কথা বা কাজ দ্বারা কষ্ট দেয় না, সেই প্রকৃত মুসলমান। যেহেতু ক্ষমা ও উদারতা আল্লাহ তাআলা গুণ, তাই উদারতার ধর্ম ইসলামের অনুসারী মুসলমানগণও উদার প্রকৃতির এবং ক্ষমাপ্রবন হয়ে থাকেন।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ক্ষমা উদারতা ও দয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। উদাহরণ স্বরূপ কিছু হাদিস তুলে ধরা হলো-

>> এক মহিলা ব্যভিচারিণী গর্ববতী হয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে দোষ স্বীকার করেন। ওই মহিলা প্রিয়নবিকে তার অপরাধের জন্য পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার জন্য বারবার আবেদন করেন।

যখন ওই মহিলাকে পাথর মারা হয়, তখন হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে অভিসম্পাত করছিলেন।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, হে খালিদ! নম্র হও। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! সে (ওই মহিলা) এমন অনুশোচনা করেছে যে, এমনকি একজন দোষী খাজনা আদায়কারীও যদি অনুতপ্ত হতো তবে তাকেও ক্ষমা করা হতো। (বুখারি ও মুসলিম)

>> অন্য হাদিসে এসেছে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একদিন এক ইয়াহুদি বেদুইন সালাম দেয়ার পরিবর্তে বললেন, ‘আস-সামু আলাইকুম’ অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হোক।

ইয়াহুদির এ অভিভাদন শুনে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রেগে যান এবং বলেন, ‘তোমার মৃত্যু হোক, আল্লাহর লানৎ হোক তোমার ওপর।

তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! থেমে যাও। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা দয়াশীল; তিনি দয়া-মায়াকে ভালোবাসেন।’

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন- ‘আপনি ক্ষমা করুন, সৎ কাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন। (সুরা আ’রাফ : আয়াত ১৯৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘অতএব আপনি তাদেরকে ক্ষমো করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ১৫৯)

পরিশেষে :
আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার ইবাদত ও তাঁর কাছে ক্ষমার শিক্ষা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষও ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। তাই প্রতিদিনের কথা ও কাজে ভুল-ত্রুটি হওয়াই স্বাভাবিক।

এ কারণেই মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষমা, দয়ামায়া ও উদারতা প্রদর্শন যেমন আল্লাহর নির্দেশ; তেমনি তা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো নীতি ও আদর্শও বটে।

তাই তাকওয়াবানদের উচিত কুরআনের নসিহত গ্রহণ এবং প্রিয়নবির আদর্শ বাস্তবায়নে প্রতিটি কাজে ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করা। তবে মানুষ হবে সফলকাম।

যে সফলতার ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবমান হও; যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সব কথা ও কাজে ঘটিত অপরাধে ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করার তাওফিক দান করুন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ক্ষমা ও দয়ার গুণাবলী অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।