Don't Miss
Home / খেলাধূলা / ক্রিকেট / তালগোল পাকিয়ে ২০ রানে হারল বাংলাদেশ

তালগোল পাকিয়ে ২০ রানে হারল বাংলাদেশ

এমএনএ স্পোর্টস রিপোর্ট : সৌম্য সরকারের দারুণ ইনিংসে অনেকটা সময় সমান তালে লড়াই করেও পেরে উঠল না বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পর তালগোল পাকিয়ে ফেলা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ২০ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে। শেষ ৫ ওভারে ঝড় তোলা দক্ষিণ আফ্রিকা পেল আরেকটি দুর্দান্ত জয়।
একে একে তিন হাত বদলেছে টাইগারদের নেতৃত্ব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে মুশফিকুর রহিম, ওয়ানডেতে মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিলেন সাকিব আল হাসান। পরিবর্তন যা এখানেই। হারের বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়া বাংলাদেশ ফলাফলে পরিবর্তন আনতে পারেনি। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট এবং ওয়ানডেতে বাজেভাবে সিরিজ হারা বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও ২০ রানের হার মেনে নিল।
বাংলাদেশের হয়ে সৌম্য সরকার ৩১ বলে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২৭ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এছাড়া সাব্বির রহমান ১৯, সাকিব আল হাসান ১৩, মেহেদী হাসান মিরা ১৪ এবং মুশফিকুর রহীম করেন ১৩ রান। ইমরুলের ব্যাট থেকে আসে ১০ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন বেউরান হেন্ডরিক্স, রবি ফ্রাইলিঙ্ক, ড্যান প্যাটারসন ও আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। অ্যারন ফাঙ্গিসো নেন একটি উইকেট।
বিশাল রান তাড়ায় দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন সৌম্য। ২০০ ছুঁই ছুঁই লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ড্যান প্যাটারসনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু করেন ইমরুল। হেনডরিক্সের করা দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের সমর্থকদের উজ্জীবিত করেন সৌম্য।
তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারেও আক্রমণাত্মক সৌম্যর দেখা মেলে। দুই ওভারে দুটি করে চার হাঁকিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ইমরুল ক্যাচ আউট হয়ে ফিরে গেলে কিছুটা হোঁচট খায় টাইগাররা।
ইমরুলের বিদায়ের পর সাকিবকে নিয়ে দারুণ জুটি গড়ে বাংলাদেশকে টেনে তোলেন সৌম্য। তবে প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অভিষিক্ত ফ্রাইলিঙ্কের করা সপ্তম ওভারের শেষ বলে সাকিব ডি ভিলিয়ার্সকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে হোঁচট খায় টাইগাররা।
সাকিব ফিরে গেলেও আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন সৌম্য। হাফসেঞ্চুরির পথে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আউট হয়ে ফিরে গেলে বড় ধরনের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োর করা দশম ওভারের প্রথম বলে স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়দের লেগ বিফোর আউটের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে রিভিউতে ফিল্ড আম্পায়ারে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে ক্রিজ ছাড়তে হয় সৌম্যকে। ৩১ বলে ৫টি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৭ করে ফিরে যান সৌম্য।
১১তম ওভারের চতুর্থ বলে মুশফিককে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে দেয় অ্যারন ফাঙ্গিসো। ফেলুকওয়ায়োর করা দ্বাদশ ওভারে মাহমুদউল্লাহ আউট হয়ে ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে টাইগাররা।
মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পর মিরাজ ও সাইফউদ্দিন মিলে ২৩ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের পরীক্ষা নেন। তবে তিন রানের ব্যবধানে মিরাজ, তাসকিন এবং শফিউলকে আউট করে প্রোটিয়াদের জয়কে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করে স্বাগতিক বোলাররা। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে শফিউল আউট হওয়ার পর সাইফউদ্দিন ও রুবেল মিলে ১৬ বলে ২৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমান।
দারুণ চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তবে তার অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে কেবল।
১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২ উইকেটে ৯৭। বাংলাদেশের ৩ উইকেটে ৯৭। এরপরই বাংলাদেশের ছন্দপতন। ডট বল বেশি খেলে চাপ বাড়িয়ে রান তোলার তাড়ায় উইকেট হারায় অতিথিরা। ১৫ ওভার শেষেও রানে দু দল ছিল পাশাপাশি। কিন্তু মাচ কার্যত তখনই শেষ। দক্ষিণ আফ্রিকা হারিয়েছিল ৪ উইকেট। বাংলাদেশ তখন হারিয়ে ফেলেছে ৬টি।
এর আগে পচেফস্ট্রুমে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়েছে প্রোটিয়ারা।
চার পেসার নিয়ে নামা বাংলাদেশ বোলিং শুরু করেছিল স্পিন দিয়ে। সাফল্যও আসে দ্রুত। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে বোল্ড করে হাশিম আমলাকে বিদায় করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শুরু থেকে ঝড় তোলা কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে এবি ডি ভিলিয়ার্সের জুটি জমে উঠতে সময় নেয়নি। টর্নেডো ইনিংস খেলা ডি ভিলিয়ার্স এক পর্যায়ে ৭ বলের মধ্যে হাঁকান ছয়টি বাউন্ডারি। এর সবই যে বাজে বল ছিল এমন নয়। দারুণ শটে গ্যাপ বের করে নিয়েছেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
দুই প্রান্তে স্পিন আনার পর ভাটা পড়ে রানের স্রোতে। মিরাজ-সাকিবের দুটি আঁটসাঁট ওভারে তৈরি হওয়া চাপ ছক্কায় উড়াতে চেয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। সঙ্গে হয়ে যেত ফিফটি। পারেননি তিনি, মিরাজের বলে লং অফে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহর হাতে।
ডি ভিলিয়ার্স ২৭ বলে আটটি চারের সাহায্যে খেলেন ৪৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস।
চোটের জন্য ছিটকে যাওয়া ফাফ দু প্লেসির জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া জেপি দুমিনি ফিরেন দ্রুত। সাকিবকে ওড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন ইমরুলের হাতে। লং অফে সহজ ক্যাচ কঠিন করে মুঠোয় নেন তিনি।
ক্যারিয়ার সেরা ৫২ ছাড়িয়ে আরও দূরে চোখ রাখা ডি কককে এলবিডব্লিউ করে ফেরান রুবেল হোসেন। পেসারদের মধ্যে এদিন তিনিই ছিলেন সেরা বোলার। ৪৪ বলে খেলা ডি ককের ৫৯ রানের ইনিংসটি সাজানো ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।
অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলার ও ফারহাদ বেহারদিনের ৫ ওভার স্থায়ী ৬২ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে যায় দুইশ রানের কাছে। জুটিতে অগ্রণী ছিলেন ১৭ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৩৬ রান করা বেহারদিন। এছাড়া ডেভিড মিলার ১৯ বলে ২৫ রান করেন।
৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মিরাজ। একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও রুবেল। রুবেল ছাড়া অন্য পেসাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন শফিউল ইসলাম। ২ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
প্রথম দফায় চারটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। সেবার চার ম্যাচেই হেরেছিল দল। হার দিয়েই শুরু হল অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় দফা। এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সুযোগ আছে। দেশে ফিরে যাওয়ার আগে আগামী রবিবার পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ০-২ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরপর ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফির দলের সঙ্গী হয় ০-৩ ব্যবধানের হোয়াইটওয়াশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলতি সিরিজে প্রথম জয়ের সন্ধানে নেমেছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ একাদশ : ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ : কুইন্টন ডি কক, হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার, ফারহান বিহারদিয়েন, আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো, ফ্রাইলিঙ্ক, অ্যারন ফাঙ্গিসো, ড্যান প্যাটারসন ও হেন্ডরিক্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ২০ ওভারে ১৯৫/৪ (ডি কক ৫৯, আমলা ৩, ডি ভিলিয়ার্স ৪৯, দুমিনি ১৩, মিলার ২৫*, বেহারদিন ৩৬*; সাকিব ১/২৮, মিরাজ ২/৩১, রুবেল ১/৩৪, তাসকিন ০/২১, শফিউল ০/৩৩, সাইফ ০/২০, মাহমুদউল্লাহ ০/২৩)
বাংলাদেশ : ১৭৫/৯ (ইমরুল ১০, সৌম্য ৪৭, সাকিব ১৩, মুশফিক ১৩, সাব্বির ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩, সাইফ ৩৯*, মিরাজ ১৪, তাসকিন ০, শফিউল ১, রুবেল ২*; প্যাটারসন ২/২৯, হেনড্রিক্স ২/৪২, ফ্রাইলিংক ২/৩৩, ফেলুকওয়ায়ো ২/২৫, দুমিনি ০/১৫, ফাঙ্গিসো ১/৩০)
ম্যাচ সেরা : এবি ডি ভিলিয়ার্স
x

Check Also

টেস্টে বাংলাদেশ ২-০ ম্যাচে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে

এমএনএ খেলাধূলা ডেস্ক : বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ২-০ ম্যাচে হেরেছে। ২৩১ রানের মামুলি টার্গেট ...