এমএনএ ডেস্ক রিপোর্ট : ভয়াবহ নিমতলী ট্র্যাজেডির সাত বছর আজ ৩ জুন। ২০১০ সালের আজকের এই দিনে পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন লোক প্রাণ হারান। ঘটনাস্থলে বিভিন্ন গুদামে রক্ষিত মারাত্মক দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের কারণেই ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার আতঙ্ক এখনো কাটেনি পুরান ঢাকাবাসীর মন থেকে। রাসায়নিকের গুদামগুলো পুরোপুরি না সরানোয় সাত বছর ধরে আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো আরো বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযানের জন্য ৪০০ অবৈধ গুদামের তালিকা করেছিল ফায়ার সার্ভিস। তালিকা ধরে উচ্ছেদ অভিযান হয়নি আজও। ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক গুদাম না সরানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিমতলী, নবাব কাটরা, আগামসীহ লেনসহ পুরনো ঢাকার বাসিন্দারা।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীর ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টার দিকে কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ছয়তলা বাড়িটির নিচতলায় দুই বোন রুনা আর রত্মা এবং পাশের বাড়িতে আসমা নামে এক মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনেরা পার্লারে সাজছিল। আর বাড়ির নিচতলায় রান্না চলছিল। রান্নার জায়গার পাশেই ছিল কেমিক্যালের গুদাম। প্রচণ্ড তাপে গুদামে থাকা কেমিক্যালের প্লাস্টিক ড্রাম গলে যায়। এরপর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে দরজা জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। রাসায়নিক তপ্ত লাভার মতো ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। অল্প সময়েই পুরো এলাকাটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরিতে রূপ নেয়। ঘটনাস্থলে নিচতলায় থাকা একই পরিবারের এগারোজনের মৃত্যু হয়। আর সামনের ৫৫ নম্বর বাড়ির ৬ জন এবং বিয়ের বাড়ি লাগোয়া বাড়ির আরো ছয়জনের তাত্ক্ষণিক মৃত্যু হয়। বিয়ের সাজের জন্য পার্লারে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিন কন্যা। পরে তিন কন্যাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃস্নেহে গণভবনে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। তিন মেয়ের স্বামীদের চাকরি দেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ শনিবার নিমতলীর মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া, মিলাদ মাহফিল, দুঃখীদের মাঝে খাবার বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। নিমতলী ট্রাজেডি স্মরণে নির্মিত ‘ছায়া স্মৃতিস্তম্ভে’ হতাহতদের পরিবার, স্থানীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, ওয়ার্ড কমিশনার ও কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের তরফ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।