আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা
Posted by: News Desk
April 29, 2018
এমএনএ ফিচার ডেস্ক : শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম দিন আজ। শুধু জন্ম দিন নয়, এই একই দিনে সিদ্ধিলাভ আর মহাপরিনির্বাণ (মৃত্যু) লাভ করেছিলেন তিনি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব।
বুদ্ধের জীবনের এ তিনটি প্রধান ঘটনাকে ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ নামে অভিহিত করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আজ ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ উদযাপন করবেন।
মহামানব যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও সোয়া ৬০০ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন গৌতম বুদ্ধ। ৬২৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এক পরম পবিত্রতম তিথিতে কপিলাবস্তুর নিকটবর্তী লুম্বিনী উদ্যানে তার জন্ম।
দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর ৫৮৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন প্রকৃতির সৌন্দর্যঘেরা গয়ার বোধিবৃক্ষমূলে। এরপর সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেন।
৫৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কুশিনগরের মল্ল রাজাদের শালবনে ৮০ বছর বয়সে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের জন্মের হিসাবকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বুদ্ধাব্দ বা বছর হিসাব করেন। সে হিসাবে আজ ২৫৬২ বুদ্ধাব্দ শুরু।
বৈশাখের পূর্ণিমা তিথিতে এই পুণ্যোত্সবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। অর্চনার পাশাপাশি তারা পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করেন।
পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় বোধি বৃক্ষতলে জগৎ আলোকিত করে মানবমুক্তির পথ বের করেন মহামতি গৌতম। লাভ করেন বুদ্ধত্ব। কপিলাবস্তু থেকে শ্রাবস্তী, বৈশালী, চুনার, কৌশাম্বী, কনৌজ, মথুরা, আলবী (বর্তমান নেপাল, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান) প্রভৃতি বহু জায়গায় তিনি ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করেন। জীবনের শেষ অধ্যায়ে তিনি রাজগৃহ থেকে কুশীনগর গমন করেন। কুশীনগরের কাছে পাবা নগরে উপস্থিত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি মল্লদের শালবনে শালগাছের নিচে শয়ন করেন। তখন আকাশে বৈশাখী পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আলোয় চারদিক উদ্ভাসিত। অনন্ত আকাশের নিচে যুগ্ম শালবৃক্ষের নিচে সমবেত শিষ্যগণ। তিনি উচ্চারণ করেন মহাবাণী, উৎপন্ন দ্রব্য মাত্রেরই বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, অপ্রমত্ত হয়ে কর্তব্য সম্পাদন কর। বৈশাখী পূর্ণিমাতেই ৮০ বছর বয়সে বুদ্ধ লাভ করেন মহাপরিনির্বাণ। বুদ্ধের মূলমন্ত্র ‘সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু/জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’।
বুদ্ধ বলেছেন, জগতে কর্মই সব। মানুষ তার কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করবে। ভাল কাজ করলে ভাল ফল এবং খারাপ কাজের জন্য খারাপ ফল পাবে। কর্মানুসারে মানুষ অল্প আয়ু, দীর্ঘ আয়ু, জটিল ব্যাধিগ্রস্ত, নীরোগ, বিশ্রী-সুশ্রী, সুখী-দুঃখী, উঁচু-নিচু, জ্ঞান-মূর্খতা ইত্যাদি প্রাপ্ত হয়। মানুষ কর্মের অধীন।
সারাবিশ্বের বুদ্ধ অনুসারী কোটি কোটি ভক্ত আজ বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভক্তিতে পালন করবে দিনটি। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপন করবে পবিত্র দিবসটি।
জাতিসংঘ আজকের দিবসটিকে ‘বেশাখ ডে’ হিসেবে পালন করে। আজ শুরু হবে ২৫৬২ বুদ্ধাব্দ।
দিবসটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একই সঙ্গে শোক ও গৌরবের। ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে তারা দিবসটি উদযাপন করবেন।
দিনব্যাপী প্রার্থনা, বুদ্ধ জীবনের নানা দিক আলোচনা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দিনটি কাটাবেন। আজ সরকারি ছুটির দিন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এ ছাড়া বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসব বাণীতে বৌদ্ধ জীবনদর্শনের নানা দিক তুলে ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তা অনুকরণ ও অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ উপলক্ষ্যে জাতীয় দৈনিকসমূহ আজ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ-প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন ও বেতারেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, মহামতি বুদ্ধ অহিংসা ও সাম্যের জয়গান গেয়েছেন।
তিনি ছিলেন অহিংস, ন্যায় ও সাম্যনীতির এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ। বুদ্ধবাণীতে বারবার ধ্বনিত হয়েছে অহিংসা, শান্তি ও বিশ্বপ্রেম এবং মহামৈত্রীর কথা।
এ ধর্মে সবার সামগ্রিক সুখকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তাইতো মহামতি বুদ্ধের বাণী হল- ‘সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু‘’ অর্থাৎ, জগতের সব জীব সুখী হোক।
তিনি বলেন, এ ধর্মে জিঘাংসা, যুদ্ধপ্রবণতা, বিদ্বেষ ইত্যাদির কোনো স্থান নেই। বিদ্যমান জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বুদ্ধের বাণী এখনও সমকালীন।
সমগ্র বিশ্বের বৌদ্ধরা এবং মানবতাবাদী দার্শনিক চিন্তাবিদরা বুদ্ধের জীবনদর্শনকে গভীরভাবে অনুধাবন করেন। বৌদ্ধ ধর্মে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা আটটি বিশুদ্ধ পথের কথা বলা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- সৎ বাক্য বলা, সৎ চিন্তা করা, সৎ কর্ম করা, সৎ জীবিকা নির্বাহ করা, সৎ প্রচেষ্টা, সৎ স্মৃতি, সৎ সমাধি করা ইত্যাদি। বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, অষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুশীলন ও চর্চায় জীবন সুন্দর, মাধুর্যময় ও পরিপূর্ণ হয়।
এ ছাড়া বৌদ্ধ ধর্মে অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘পঞ্চশীল’। এতে বলা হয়েছে- প্রাণী হত্যা, চৌর্যবৃত্তি, ব্যভিচার না করা, মিথ্যা না বলা এবং মাদকদ্রব্য সেবন না করা।
এসব কাজে কাউকে কোনোরকম উৎসাহিত না করার কথাও বলা হয়েছে। মহামতি বুদ্ধের এ পঞ্চনীতি পালনে ব্যক্তি যেমন উপকৃত হয়, নিরাপদে থাকে; তেমনি সমাজ ও দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে অবস্থান করতে পারে।
এভাবে বুদ্ধের বাণী ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সুখ, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে স্বীকার করা হয়ে থাকে।
দিবসটি উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন উপাসনালয় ‘প্যাগোডা’য় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিশেষ করে তিন পার্বত্য এলাকায় নানা কর্মসূচি পালিত হবে।
এসব এলাকা আজ উৎসবমুখর থাকবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন ঢাকার মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ গ্রহণ, রক্তদান কর্মসূচি, বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ ও অষ্টপরিষ্কার দান, ভিক্ষুসংঘের পিণ্ডদান, ত্রিপিটক পাঠ, আলোচনা, প্রদীপ পূজা ও আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শুভ আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা 2018-04-29