খোশ আমদেদ মাহে রমজান
Posted by: News Desk
April 25, 2020
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিন ধাপে এবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবে।
সারা বছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তারা যে পাপ করেছে, তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার মোক্ষম মাস হল এ রমজান। সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তারা যে নাজাতের পথ খুঁজবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাজার রজনীর শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর রমজান মাসকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন।
কোরআনের শিক্ষা হল বিশ্বাসী মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে অশেষ কল্যাণ দান করা। কৃচ্ছ্র সাধন ও আত্মসংযমের এ মাসে তাই সংসারী মানুষ আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার ওয়াদা করে, তাদের সবরকম গুনাহ্ মাফ করে দেয়ার আকুল প্রার্থনা জানায়। এ মাসে আল্লাহ তার বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিতাপের বিষয়, এবার রমজান এসেছে এমন এক সময়ে যখন সারা বিশ্বের মানুষ মহামারী হিসেবে দেখা দেয়া করোনা ভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণে আতঙ্কিত। পৃথিবীতে সুদূর অতীতেও এমন পরিস্থিতি আর সৃষ্টি হয়নি। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, মসজিদে নামাজ পড়াও হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
এ বাস্তবতায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মুসলমানদের ঘরের ভেতর নামাজ পড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারাবির নামাজও পড়তে হবে ঘরে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানের উচিত যার যার বাড়িতে নামাজ আদায় করে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য আল্লাহতায়ালার দরবারে মোনাজাত করা। মহান আল্লাহ আমাদের এই বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন। কোনো অশুভ ও অকল্যাণ যেন আমাদের স্পর্শ করতে না পারে।
রমজানে একশ্রেণির ব্যবসায়ী সততা আর ন্যায়নীতি ভুলে অতি মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতায় নামে। তারা রমজান মাসকে মুনাফা লোটার প্রায় হাতিয়ার করে ফেলে। জানা গেছে, বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পর এবারও রমজান ঘিরে একশ্রেণির ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে কারসাজি শুরু করেছে। যথেচ্ছভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর এই প্রবণতা আমাদের ব্যবসায়ীদের কৃচ্ছ্র আর আত্মশুদ্ধির বিপরীতে নিয়ে গেছে যেন।
রমজানে বিশেষ কিছু খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা দোকানিরা বাড়তি চাহিদাকে মুনাফা লোটার হাতিয়ার করে তোলে। রমজানের শিক্ষা অনুসরণের বদলে তারা যেন আরও সুযোগসন্ধানী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ বাস্তবতায় রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন।
অতীতে দেখা গেছে, রমজানে একশ্রেণির মানুষ সংযম ও কৃচ্ছ্র সাধনের পরিবর্তে ভোগ-বিলাসে মেতে ওঠে। সম্পদশালীদের ভেতর চলে ইফতার পার্টির প্রতিযোগিতা। অবশ্য এবার করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এ সবকিছু হবে না। ভোগ-বিলাস ও যথেচ্ছাচার ত্যাগ করে সহজ, সুন্দর ও অনাড়ম্বর জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবারের রমজানে। বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে সবচেয়ে কষ্টে আছে দরিদ্র মানুষ।
গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমজানের শিক্ষা। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে গরিবদের পাশে এসে দাঁড়ানোর। এ পবিত্র মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
খোশ আমদেদ রমজান মাহে 2020-04-25