Don't Miss
Home / আজকের সংবাদ / অর্থনীতি / পণ্য রপ্তানি না করে ৫ বছরে ৩৩ কোটি টাকা প্রণোদনা আত্মসাৎ
প্রণোদনা প্রদান করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগি

পণ্য রপ্তানি না করে ৫ বছরে ৩৩ কোটি টাকা প্রণোদনা আত্মসাৎ

এমএনএ অর্থনীতি ডেস্ক : রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যে ৩৭টি খাতে নগদ প্রণোদনা প্রদান করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র পণ্য রপ্তানি না করেও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রণোদনা হাতিয়ে নিচ্ছে।রাজধানীর বিজয়নগর এলাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডো এম্পেক্স লিমিটেড।২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এগ্রো প্রসেসিং ফুড ঘোষণায় কাস্টমসে ৪৫টি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি না করে সরকারি আর্থিক প্রণোদনা আত্মসাৎ করেছে এমন অভিযোগে ডো এম্পেক্স লিমিটেডের ৪৫টি রপ্তানি পণ্য চালানের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, অফডক সহ রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী ডো এম্পেক্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৩০টি চালানে পণ্য রপ্তানি না করে প্রণোদনার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় কাস্টমস।৩০টি পণ্য চালানে ৪ কোটি ২১ লাখ ৭২ হাজার টাকা রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাৎ করে ডো এম্পেক্স লিমিটেড। চালানগুলোতে ২৫ লাখ ৩২০ ইউএস ডলার বা ২১ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৪০ টাকা (প্রতি ডলার ৮৭ টাকা হিসেবে) পণ্য রপ্তানি দেখানো হয়।

রপ্তানিকারকের সাথে ৫টি সিএন্ডএফ এজেন্ট, ৩টি শিপিং এজেন্ট/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট এবং শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু কাস্টমস কর্মকর্তার পারষ্পরিক যোগসাজসের প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

শুধুমাত্র ডো এম্পেক্স লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটিই নয়, ফুড স্টাফ জাতীয় খাদ্য পণ্য এবং ফ্রেশ পটেটোর ৮৭২টি চালানে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন জালিয়াতির প্রমাণ পায় কাস্টমস সূত্র। এসব চালানে প্রতিষ্ঠানগুলো ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৪ টাকা সরকারি রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাৎ করেছে। প্রতি ডলার ৮৭ টাকা হিসেবে রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাতের পরিমাণ ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৭৩ ইউএস ডলার।এসব চালানে রপ্তানি দেখানো হয় ২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার ২৯ ইউএস ডলার মূল্যের পণ্য।  ৮৭২টি চালানের  মধ্যে ১৯১টি ফ্রেশ পটেটো এবং বাকি ৬৮১টি ফুড স্টাফ পণ্য দেখানো হয়েছে।

রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যে ৩৭টি খাতে নগদ প্রণোদনা প্রদান করছে। এর মধ্যে কৃষিপণ্যের আওতায় এগ্রো প্রসেস ফুড, শাকসবজি ও ফলমূল রপ্তানিতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নগদ আর্থিক প্রণোদনা (ক্যাশ ইনসেনটিভ) দেয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র পণ্য রপ্তানি না করেও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রণোদনা হাতিয়ে নেয়।

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, ডো এম্পেক্সের পাশাপাশি এমএস খান এন্টারপ্রাইজ, জেটিএফ ইন্টারন্যাশনাল, মাসালা ফুডস লিমিটেড, আল আমিন কর্পোরেশন, আহনাফ কর্পোরেশন,  অন্তরা কর্পোরেশন, ফাতেমা কর্পোরেশন, জান্নাত কর্পোরেশন, এমকে এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, এমবি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, এমটি এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, মদিনা এগ্রো, মামুন এন্টারপ্রাইজ, মিয়াজী ফুড প্রোডাক্টস, এসএস ফুড লিমিটেড, সিয়াম ইন্টারন্যাশনাল এবং আলভি এন্টারপ্রাইজের চালানে রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

জালিয়াতির সাথে যুক্ত মামুন এন্টারপ্রাইজ এবং মিয়াজী ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক ইলিয়াছ মামুন মিয়াজী। একই মালিকের প্রতিষ্ঠান দুটি ২০৫টি চালানে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকার রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাৎ করে।

এই বিষয়ে ইলিয়াছ মামুন মিয়াজীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রপ্তানি প্রণোদনা আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানি করে আর্থিক প্রণোদনা গ্রহণ করেছে।

যেভাবে জালিয়াতি করে ডো এম্পেক্স লিমিটেড

কাস্টমসের শুল্ক সংক্রান্ত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে প্রতিষ্ঠানটি কোন পণ্য রপ্তানি করেনি বলে তথ্য পায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ডো এম্পেক্স লিমিটেডের দাখিলকৃত বিল অব এক্সপোর্ট-এর বিপরীতে বাংলাদেশে কোন বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে কিনা এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি কোন নগদ আর্থিক প্রণোদনা গ্রহণ করেছে কিনা তা জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চিঠি দেয় কাস্টমস। অগ্রণী ব্যাংক,মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড বরাবর দেওয়া হয় এসব চিঠি।

পরবর্তীতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে দাখিলকৃত বিল অব এক্সপোর্ট-এর পণ্য চট্টগ্রামস্থ বেসরকারি অফডকসমূহে রপ্তানির উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, গ্রহণ করা হয়ে থাকলে উক্ত পণ্য রপ্তানি হয়েছে কিনা তা জানতেও চিঠি দেয় কাস্টমস।

প্রাইভেট অফডক থেকে কাস্টমস জানতে পারে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডো এম্পেক্স লিমিটেডের অনুকূলে দাখিলকৃত ৪৫টি বিল অব এক্সপোর্ট এর মধ্যে ১৫টি বিল অব এক্সপোর্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল) ডিপোতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে স্টাফিং হয়েছে। বাকি ৩০টি পণ্য চালান রপ্তানি করা হয়নি।

অস্তিত্বহীন শিপিং এজেন্ট

৩০টি ভুয়া রপ্তানি পণ্য চালানের বিল অব ল্যাডিং-এর তথ্য অনুযায়ী, ৩টি শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারের নাম উল্লেখ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ওশান ফ্রেইট সিস্টেম, এভারেস্ট গ্লোবাল লজিস্টিকস এবং গ্রিন ভিউ লজিস্টিকস।

প্রতিষ্ঠানগুলো চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়।এদের তথ্যও ইন্টারনেটে খুঁজে পায়নি কাস্টমস। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনে খোঁজ নিয়েও কোন তথ্য পায়নি কাস্টমস কর্মকর্তারা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারে ৩টি শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠান তাদের এসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত নয়।

দায় নিতে নারাজ ৫টি সিএন্ডএফ এজেন্ট

৩০টি পণ্য চালানে সিএন্ডএফ এজেন্ট হিসেবে নাম উল্লেখ রয়েছে কেএইচএল এক্সিম লিমিটেড, একে এন্টারপ্রাইজ-২০০৬, জিআর ট্রেডিং কর্পোরেশন সিএন্ডএফ লিমিটেড, এ এন্ড ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং প্যান বেঙ্গল এজেন্সিজ লিমিটেড।এসব প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। তবে কাস্টমসের কাছে সিএন্ডএফ এজেন্ট মালিকরা জানিয়েছে, এই জালিয়াতির সাথে তারা কেউই জড়িত নয়। তাদের কোন না কোন কর্মকর্তা এই চক্রের সাথে জড়িত। তাদের পাসওয়ার্ড অন্য কেউ ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির জন্য বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করেছে।

কাস্টমস জানিয়েছে, ৫টি সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে উক্ত শিপিং বিলসমূহ দাখিল করা হয়েছে। যেহেতু উল্লিখিত সিএন্ডএফ এজেন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করা হয়েছে, সেহেতু এ বিল অব এক্সপোর্ট দাখিলের বিপরীতে তাদের দায়বদ্ধতা এড়ানোর সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জিআর ট্রেডিং কর্পোরেশন সিএন্ডএফ লিমিটেডের পরিচালক রাশিদা পারভীন রুনুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কারা এই জালিয়াতি করেছে তা তার বোধগম্য হচ্ছে না।প্যান বেঙ্গল এজেন্সিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সালাম বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। এই ঘটনায় কিভাবে আমার প্রতিষ্ঠানের নাম এলো জানিনা।

কাস্টমসের শুনানীতে আসেনি রপ্তানিকারক

জালিয়াতির ঘটনায় রপ্তানিকারক ডো এম্পেক্স লিমিটেডের প্রতিনিধিদের ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুনানীতে অংশ নেওয়ার জন্য দুইবার চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।কাস্টমস সূত্র আরো জানায়, ৩০টি বিল অব এক্সপোর্ট সংশ্লিষ্ট পণ্যসমূহ কোন প্রাইভেট কন্টেইনার ডিপো (অফডক) কর্তৃক রপ্তানির উদ্দেশ্যে গৃহীত/স্টাফিং হয়নি। রপ্তানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং শিপিং এজেন্ট/ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট  পারষ্পরিক যোগসাজসে জাল-জালিয়াতি করে রপ্তানির বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করে।ডো এম্পেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার মিঠুর সাথে মোবাইলে গত ২৬ ও ২৭ মার্চ একাধিক কল এবং এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রতিষ্ঠানটির দুটি টিএন্ডটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেখানেও কেউ সাড়া দেয়নি।

জড়িত কাস্টমস কর্মকর্তারাও

চালানগুলোর শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় কায়িক পরীক্ষণকারী কাস্টমসের যেসব কর্মকর্তাদের একাধিক চালানে স্বাক্ষর ছিলো তারা হলেন রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মোঃ মনিরুজ্জামান, মোঃ ফরিদ উদ্দিন সরকার, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, জসীম উদ্দিন মজুমদার, নুরুল হক, জমির হোসেন, রেহানা আক্তার, জসিম উদ্দিন মজুমদার, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও)  মোঃ শাহনূর আলম, মোঃ ফারুক আব্দুল্লাহ, মোঃ আরিফুর রহমান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাফায়েত উল্লাহ ভূঁইয়া, ফিরোজ শেখ, শাহিনুর আলম, সামছুজ্জামান , রনি বড়ুয়া, শাহীন আহমেদ, জাহাঙ্গীর কবির।

এসব কর্মকর্তা ছাড়াও শুল্কায়নে সহকারী কমিশনার মবিন উল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগম, গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, মনজুরুল হক, এসএম শাহনেওয়াজ চৌধুরী, এএইচএম নজরুল ইসলামের ইউজার আইডি ব্যবহার হয়েছে।কাস্টমস সুত্র জানায়, এই পণ্য চালানগুলোর শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় যেসব কাস্টমস কর্মকর্তা জড়িত তা তদন্ত করা প্রয়োজন। যে সকল কাস্টমস কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও নাম উল্লেখ রয়েছে তার সঠিকতা যাচাই করাও প্রয়োজন। কোন কাস্টমস কর্মকর্তা এই চক্রের সাথে জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে জানিয়েছে কাস্টমস সূত্র।

যেসব কাস্টমস কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করা হয়েছে এবং শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে বদলী হয়েছেন।এই বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগম বলেন, শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে আমরা স্বাক্ষর করি। এক্ষেত্রে জালিয়াতি হয়ে থাকলে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।

x

Check Also

অন্তর্বর্তী সরকার

একের পর এক বিক্ষোভে অন্তর্বর্তী সরকারের চাপ বাড়ছে: রয়টার্স

এমএনএ ফিচার ডেস্কঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজপথে ...