পিপিই ছাড়াই ডিউটি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
Posted by: News Desk
March 24, 2020
এমএনএ রিপোর্ট : বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও দিনদিন বেড়ে চলেছে। মানুষের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্কও। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না চিকিৎসক ও নার্সরাও। আতঙ্কে রয়েছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল এক চিকিৎসক ও দুই নার্স করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আতঙ্কের মধ্যেও মানুষকে সুরক্ষা দিতে পিপিই ছাড়াই ডিউটিতে সারাদেশে মাঠে থাকতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, সারাদেশে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা পৌনে ৩ লাখ। জনগণের সেবক হিসেবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই পুলিশ মাঠে থাকছে। বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে সুরক্ষিত পোশাক পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিদেশফেরত প্রবাসীদের শনাক্ত করতে অথবা হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্য করতে অথবা করোনায় মৃতদের লাশ দাফন করার কার্যক্রমে থাকছে পুলিশ ও র্যাব।
র্যাব সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিস্তার হওয়ার পর থেকেই অভিযান কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এখনো পিপিই সবার কাছে নেই। র্যাবের বিভিন্ন ইউনিট ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু পিপিই সংগ্রহ করেছে। আরো পিপিই সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, যেহেতু র্যাবকে করোনার মধ্যেই ডিউটি পালন করতে হচ্ছে, তাই সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, র্যাবের সবার মুখেই মাস্ক রয়েছে। তবে পিপিই বিষয়ে ইতিমধ্যে ইউনিট পর্যায়ে চেষ্টা করে কিছু সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা আমাদের কেউ অসুস্থ হলে ব্যবহার করতে পারবে। তবে ডিউটির জন্য পিপিই সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে পুলিশ সারাদেশে দেশে ফেরত প্রবাসীদের তালিকা সংগ্রহ করছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে। অনেকেই বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন নির্দেশনা মেনে না চলে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার ইতালিফেরতদের বাড়ির আশপাশেও পুলিশ ডিউটি দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে। মাঠ পর্যায়ে ডিউটি করা পুলিশে এখনো পিপিই দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে খোদ পুলিশ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগযোগ করছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চট্টগ্রামের এক তৈরি পোশাক কারখানায় যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। পুলিশ সদর দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ করছি। পিপিই তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
এদিকে পিপিই তৈরিতে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস) বাংলাদেশ প্রধান স্বপ্না ভৌমিক। এমঅ্যান্ডএসের সদস্য কারখানাতেই পিপিই তৈরি হচ্ছে। তার সঙ্গে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার কয়েকজন উদ্যোক্তাও কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রনাথ, বুয়েট অ্যালামনাইয়ের প্রতিনিধি ফজলে মাহবুব ও পে ইট ফরোয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাদল সৈয়দের উদ্যোগে পিপিই বানানোর উদ্যোগ প্রথমে নেওয়া হয়। পরে উদ্যোগটির সঙ্গে যুক্ত হয় রোটারি ক্লাব ঢাকা নর্থ ওয়েস্ট অধীনে কয়েকটি রোটারি ক্লাব এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিটি সংগঠনই পিপিইর জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছে। তবে অনেক কারখানায় পোশাকটি বানানোর অনুরোধ করলেও কেউ রাজি হয়নি। পরে বিষয়টি স্বপ্না ভৌমিককে অবহিত করলে তিনি কারখানার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগিতা করেন।
পে ইট ফরোয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা বাদল সৈয়দ বলেন, নমুনা তৈরির পর গত শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখিয়েছি। মন্ত্রণালয় মৌখিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত যে তহবিল সংগ্রহ করেছি, তাতে ৪ লাখ পিপিই তৈরি করতে পারব। এসব পিপিই বিভিন্ন হাসপাতালে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে দিতে চাই।’ বাদল সৈয়দ বলেন, ‘পিপিই তৈরিতে স্বপ্না ভৌমিক অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি এগিয়ে না এলে পিপিই তৈরির উদ্যোগটি বড়ো ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যেত।’
Like this:
Like Loading...
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াই করছে পিপিই ডিউটি 2020-03-24