এমএনএ শিল্প ও বাণিজ্য ডেস্কঃ পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন একদল বিনিয়োগকারী। সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর এসব বিনিয়োগকারী রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মানববন্ধন পালন করেন।
এ সময় দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন তাঁরা।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, ২০১০ সালেও আমরা এতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, যা গত আড়াই মাসে হয়েছি। ২০১০ সালের শেয়ারের দাম কমে ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে শেয়ারের দাম ফেসভ্যালু ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। এতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঠিক মতো জীবন-যাপন করতে পারছি না। সরকারের কাছে আকুল আবেদন পুঁজিবাজারের ২০ লাখ বিনিয়োগকারীকে বাঁচান। কারণ ২০ লাখ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রায় এক কোটি মানুষ সম্পর্কিত। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ওপর আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু বর্তমান বিএসইসির কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নাই। তাই আমরা দ্রুত বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি। অব্যাহত দর পতনের ফলে বিনিয়োগাকারীরা পথে বসে গেছে।
তারা আরও বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে এসেছি। গত দুই মাসের টানা দরপতনের ফলে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ৭০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা সবাই নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেছি। আমরা এখানে ভিক্ষা করতে আসি নাই। আমরা নিজের পুঁজি বিনিয়োগ করতে এসেছি, যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। অথচ সেই পুঁজি হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতন অভ্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।
এদিকে গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে সূচকটি ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান।
আজ শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়। পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে যে দরপতন হচ্ছে, তা অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক। বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থাহীনতার কারণে এই দরপতন হচ্ছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দিক থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এই দরপতন থামছে না।
জানা গেছে, দরপতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু শেয়ার কেনার ক্রেতা কম। বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবিসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে আছে।
আবার যাঁরা ঋণ করে শেয়ার কিনেছেন, তাঁদের শেয়ারের দাম তলানিতে নেমে যাওয়ায় (নেগেটিভ ইকুইটি) মার্চেন্ট ব্যাংক/ব্রোকারেজ হাউস বিক্রি বা ফোর্স সেল করে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ফোর্স সেল বন্ধ করাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পুঁজিবাজারের দরপতনের কারণ খুঁজে বের করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমানকে। অন্য সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।