একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস এখন জাতীয় সমস্যায় দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের কঠোর শাস্তির বিধান নেই বলেই এটা বহাল তবিয়তে চলে আসছে। এই যেমন মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কী মাত্রায় ফাঁস হয়েছে, পরীক্ষার ফলে এর প্রভাব কতটা পড়বে- এসব নিয়ে যত আলোচনাই চলুক একটি বিষয় স্পষ্ট, লাখ লাখ শিক্ষার্থী চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগ। তারা প্রশ্ন করছেন, ঢাকা বোর্ডের গণিত পরীক্ষা কি বাতিল হবে? পরের পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন যে ফাঁস হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? কিন্তু উত্তর মিলছে না।
পুলিশের সন্দেহ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সরবরাহ ও ছাপার কাজে যুক্ত কেউ না কেউ এ ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এটাও বলা হচ্ছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এক বা একাধিক লোক পরীক্ষা শুরুর আগে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ যেন ক্ষেতের ফসল রক্ষার জন্য দেওয়া বেড়াতেই ফসল খেয়ে ফেলা। তাহলে উপায়? অভিযোগের তীর কিন্তু শিক্ষকদের দিকেও ছুটে যেতে পারে। কারণ দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় সাড়ে চার হাজার মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে প্রধানত তারাই থাকেন। তাদের হাতেই জেলার ট্রেজারি থেকে পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ে দুই-তিন ঘণ্টা আগে প্রশ্নের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। কেন্দ্রে পৌঁছানোর আগেই পথিমধ্যে এ প্যাকেট খুলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়া কঠিন কাজ, তবে অসম্ভব নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমস্যা মোকাবেলার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্ন মুদ্রণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সন্দেহ নেই, বেড়ায় ক্ষেতের ফসল খেতে শুরু করলে এ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গভীর পরিতাপ ও দুঃখের সঙ্গে বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে আস্থার জায়গা শিক্ষকরা। তাদের মধ্যেও দুর্নীতিবাজ ঢুকে গেছে। তাদের হাত ধরেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে।’ আমরা ‘নকলের মহোৎসব’ ও ‘গণটোকাটুকি’ বন্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু যেভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মুহুর্তে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বেই। বিশেষভাবে হতাশ হবে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা। এটা কোনোভাবেই ঘটতে দেওয়া যায় না।
প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আগামী পরীক্ষাগুলো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে এ ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের শিক্ষা খাতে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনা এসব কিছুর ওপর কলঙ্কতিলক এঁকে দিতে পারে।
-সম্পাদক