এমএনএ ডেস্ক রিপোর্ট : আজ ১৮ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাবা দিবস। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর জুনের তৃতীয় রবিবার পালিত হয় বাবা দিবস। বিশ্বের প্রায় ৫২ দেশে এ দিবসটি পালিত হয়।
সারা বিশ্বেই বাবা দিবসে দিনটি বিশেষভাবে উৎসর্গ করা হয় পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য।
গত শতাব্দীর প্রথমের দিকেই বাবা দিবস পালন শুরু হয়। জানা যায়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই প্রথম ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম এই দিনটি পালিত হয়।
এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে ১৯১৩ সালে বাবা দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করার জন্য একটা বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯২৪ সালে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন দেন। তবে বিষয়টি বহু বছর ঝুলে ঝিল। অবশেষে ১৯৯৬ সালে বাবা দিবসকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
পৃথিবীর সব সন্তানরা আজ নিজেদের মত ভালবাসবে তাদের বাবাকে। তবে সব বাবার ভাগ্যে আজ জুটবে না ভালোবাসার চুমু। তাদের কেউ কেউ প্রবীণ নিবাসে হয়তো সন্তানের কথা ভেবে শুধু চোখের পানিই ফেলবেন। একই ভাবে পানি ঝরবে বাবা হারানো সন্তানের চোখে থেকেও।
মুজিবুল হক একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। পেইন্টিংয়ের প্রতি রয়েছে তীব্র ভালোবাসা। এখনও মাঝেমাঝে রঙতুলি নিয়ে বসেন। তবে সেই ছবি ঘরের সৌন্দর্য বাড়াল বা কমাল তা নিয়ে মোটেই ভাবেন না তিনি।
কেননা, তিনি যে সময় কাটাতেই ছবি আঁকেন। তার হাতে যে এখন অফুরন্ত সময়। নিজেকে গুছিয়ে রাখতে তার আর ভালো লাগে না। এর ছাপ পাওয়া যায় তার ঘরজুড়ে। বিকাল ৪টা নাগাদ টেবিলে নাস্তার প্লেট, পড়ে রয়েছে কলা-ডিমের খোসা। দুপুরের খাবারের এঁটো প্লেট আর উচ্ছিষ্ট খাবারও পড়ে আছে আরেকপাশে। ঘরজুড়ে যত্রতত্র ছড়ানো ছিটানো নানা জিনিসপত্র।
তিনি বলেন, একটা সময় সুন্দর খেকে সুন্দরতর ছবি এঁকে বসার ঘর, শোবার ঘরের দেয়ালের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এই রমজানের মতো অনেক রমজান তার কেটেছে স্ত্রী আর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সেহরি ও ইফতার করে। সেই দিনগুলো সুন্দর সেই ছবিগুলোর সাথে ঘরের দেয়ালেই আটকে গেছে। এক সময় দেখেছেন ছেলে-মেয়ের ব্যস্ততা তাকে পাহারাদার হতে বাধ্য করেছে। যা ভাললাগে না তার। তাই চলে আসেন আগারগাঁও-এ অবস্থিত বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান এর প্রবীণ নিবাসে।
সত্তর বছর বয়সী এ বাবার উপলব্ধি, ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানবিকবোধ জাগ্রত করতে ও সঠিক শিক্ষা দিতে পারেননি বলে তাকে এখানে থাকতে হচ্ছে।
এমন ২২ জন বাবা থাকেন এই নিবাসে। তাদের মধ্যে সাবেক আমলাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আছেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, বাবা-মা তাদের সর্বস্ব ছেলেমেয়েদের পেছনে ব্যয় করে বৃদ্ধ বয়সে প্রবীণ নিবাসে থাকতে পারে না। তাই সরকার পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইন করেছে। আইনের অধীনে ঢাকা শহরে ৮টি মামলা করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বাবা দিবসে তো অনেক সন্তান তাদের বাবাকে মিস করবে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এমন মিস করাকে মেনে দিতে পারি না। তবে প্রবীণ নিবাসে বসবাসকারী বাবারা বলেন, তারা আইন করে ছেলে-মেয়েদের সাথে থকতে চান না। ভালবাসার মাধ্যমে যদি তাদের ঘরে জায়গা হয় তাহলেই তারা সেই ঘরে থাকতে চান।
এরপরেও যে কথাটি না বললে নয় তাহলো বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে আলাদা করে কি কিছু বলতেই হয়? কিন্তু সত্যি বলতে কি, বাবার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
তাই আদর্শ ও ভালো বাবার কিছু গুণের কথা নিম্নে আলোচনা করা হলো;
* একজন দায়িত্বশীল ও যত্নবান পুরুষই আদর্শ বাবা। সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব কম থাকে। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ করেন।
* আদর্শ বাবা কাজে যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, সন্তানকে নিয়মিত সময় দিয়ে থাকেন। পড়াশোনায় সাহায্য করেন, বেড়াতে নিয়ে যান।
* আদর্শ বাবা ছুটির দিনে একসঙ্গে খেলা বা বাড়ির কাজ একসঙ্গে করে থাকেন। সন্তানের ছোট ছোট বিষয়েও অনেক গুরুত্ব দেন।
* আদর্শ বাবার স্ত্রীর সঙ্গে মাঝে মধ্যে মতের অমিল হতেই পারে, কিন্তু তার কুৎসিত রূপটি কখনোই সন্তানের সামনে আনেন না।
* ভালো বাবা ছেলে-মেয়েদের দোষগুণ নিয়ে মজা করেন না। তাদের কোনো ভুল হলে তা শুধরে দিতে চেষ্টা করেন।
* আদর্শ বাবা সংসারের কাজ-কর্ম, ছেলে-মেয়েদের দায়িত্ব সব মায়ের ওপর চাপিয়ে দেন না। বরং তিনি পরিবার সামাল দিয়ে স্ত্রীকে সাহায্য করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। এমন ব্যবহারের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের কাছে আপনার সম্পর্কে একটি ভালো মেসেজ পৌঁছায় এবং সন্তানও এভাবেই বেড়ে ওঠে ও ভালো গুণের অধিকারী হয়।
* বাবা হয়েও মাঝে মাঝে মায়ের তথাকথিত দায়িত্বগুলো পালন করলে সন্তানের সঙ্গে আপনার বন্ধন আরও মজবুত হয়ে উঠবে।
* এবজন ভালো বাবা শিশুকে গড়ে উঠতে সাহায্য করেন। দায়িত্বশীল বাবা হিসেবে সন্তানের ডায়পার বদলান, গোসল করান, জামাকাপড় বদলান, ঘুমপাড়ানোর মতো কাজকে মেয়েলি বলে তুচ্ছ করেন না। বরং স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য নিজেই এ কাজগুলো করেন।
* সন্তানের বিভিন্ন শখ এবং সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
* আদর্শ বাবা সন্তানের সামনে ধূমপান করেন না। কারণ তারা মনে করেন সিগারেটের ধোঁয়া সন্তানের হার্টের ক্ষতি করে। তার সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তারা ধূমপায়ী হলেও তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেন।
* সন্তানকে কোনো বিষয়ে কথা দিলে শত কষ্ট হলেও ভালো বাবা তা রাখার চেষ্টা করেন। বাবার শত ব্যস্ততা থাক না কেন, তারপরও সন্তানের ছোট ছোট চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
* সন্তানের ক্লাস টেস্টের পড়া তৈরিতে সাহায্য করেন। শুধু তাই নয় বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচের আগাম প্রস্তুতিতেও সাহায্য করে থাকেন বাবা। সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা করে থাকেন তিনি।
* সন্তানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে থাকেন আদর্শ বাবা। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছাকে সন্তানের মাধ্যমেই পূরণ করার চেষ্টা করে থাকেন তিনি। তবে কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। সন্তানের দক্ষতা ও মেধা অনুযায়ী তাকে এগোতে তিনি আলোর পথ দেখান।
* আদর্শ বাবা সন্তানকে শাসন করেন আদরে। সন্তানকে কড়া শাসন না করে নিয়ন্ত্রণ করেন নমনীয়ভাবে।