এমএনএ সম্পাদকীয় : শতাব্দীর ভয়াবহ বিপর্যয়ের পড়েছে বিশ্ববাসী। ইতিমধ্যে প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আমাদের দেশেও মারা গেছে আট হাজারের কাছাকাছি। বিজ্ঞানীরা এই মরণঘাতি ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আবিষ্কার করেছে ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে আবিষ্কারের শুরু থেকে। উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে চেষ্টা করবে সর্বাগ্রে এটাই স্বাভাবিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, টিকা আবিষ্কার যে দেশই করুক না কেন পৃথিবীর সকল মানুষ ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তারা যথার্থই বলেছেন। পৃথিবীর সকল মানুষ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে না পারলে করোনা মোকাবেলায় সুফল আসবেনা।
ইতিমধ্যে আমাদের দেশেও ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। সরকার চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দেশে এনে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে।
বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, যার কয়েকটি নানা চ্যানেলে দেশে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। আবার ভ্যাকসিন আসা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কাও। তবে আশার কথা হচ্ছে অবশেষে শঙ্কা দূর হয়ে দেশে আসছে ভ্যাকসিন।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন চলতি মাসে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম।
এর আগে ভারতের দেয়া ঘোষণায় ভ্যাকসিন বন্ধের খবর শঙ্কা তৈরি করেছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেহেতু বর্তমানে দেশের অন্যতম দায়িত্বশীল সংস্থা। মহাপরিচালকের ঘোষণা অনুসারে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন বিষয়ক বাংলাদেশের ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ২দিন তাদের ওয়ারহাউজে ভ্যাকসিন সংরক্ষণে রাখবে। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তেরর দেয়া তালিকামত কেন্দ্রে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম মাসে ৫০ লাখ এবং পরের মাসে আরো ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসলে ওই ৫০ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
প্রথম কারা ভ্যাকসিন পাবেন এ বিষয়ে তারা জানিয়েছেন, অনুমোদিত স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিনস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী, সম্মুখসারির গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পৌরসভার প্রতিনিধি ও কর্মচারী, মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত, জরুরি পানি-গ্যাস, বিদ্যুৎ পরিবহন কর্মী, বিমানবন্দরে নিয়োজিত কর্মচারী, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক। এছাড়াও জেলা-উপজেলা জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মচারী, ব্যাংক কর্তকর্তা-কর্মচারীও পাবে। দ্বিতীয় ধাপে বয়স্ক জনগোষ্ঠী, ৮০ বছরের ওপরে যারা তারা পাবেন, এরপর ৭৭-৭৯ বয়স্করা, এধাপে জাতীয় দলের খেলোয়াড়, যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারাও পাবেন। এভাবে হিসাব করে ৫০ লাখ প্রথম রাউন্ডে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে ৭০ বছরের উর্ধ্বে যারা ভ্যাকসিন পাবেন। তৃতীয় ও চতুর্থ মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ভ্যাকসিন প্রাপ্তরা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। পঞ্চম মাসে ধর্মীয় প্রতিনিধি, ৬৪ বছরের সকল জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন পাবেন।
মোটা দাগে কিছু শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্যাটেগরি উল্লেখ করলেও তাদের মধ্যে থেকে কারা আগে বা কারা পরে পাবে, সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা ও প্রক্রিয়া এখনও চোখে পড়ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় তালিকা করা হয়েছে। সেসব অনুসরণ করে দেশে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা সময়ের দাবি।
ভ্যাকসিন দেশে আসার আগে ভ্যাকসিন নিয়ে অভিযোগ অনুযোগ শুরু হয়ে গেছে। যত অভিযোগ অনুযোগ থাকুক না কেন, সরকার এ বিষয়ে বিচক্ষণ ভূমিকা রাখবে আশা করি। দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য যদি বত্রিশ কোটি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে এতো কথার প্রয়োজন ছিলনা। নাগরিক হিসেবে সবাই ভ্যাকসিন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেতো। যেহেতু ক্রমান্বয়ে ভ্যাকসিন আনা হবে, সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে কোন অনিয়ম যাতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। ভ্যাকসিনের যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রদানের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সতর্কতায় দায়িত্ব পালন করা জরুরী। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে একাজে সম্পৃক্ত করা যায়। এসব বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা গেলে, আশাকরি ভ্যাকসিনের সমবন্টনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে করোনামুক্ত রাখা সম্ভব হবে। ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতি হোক দেশের মানুষের কাছে তা কখনো কাম্য নয়।