Don't Miss
Home / রাজনীতি / আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য ,দেশের মানুষের জন্য কাজ করা : প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য ,দেশের মানুষের জন্য কাজ করা : প্রধানমন্ত্রী

এমএনএ রাজনীতি ডেস্ক :  দেশের মানুষের জন্য কাজ করাই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই দেশের দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। ২১ বছর পর ১৯৯৬-এ প্রথমবার সরকার গঠন করে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে নতুন নতুন পরিকল্পনা, কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করে গরিব, প্রান্তিক মানুষদের সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করি। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণ করি।
রোববার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে মানুষের জন্য কাজ শুরু করি। পুরো বাংলাদেশ ঘুরে দেখেছি। আমার রাজনীতি হল মানুষের কল্যাণের জন্য। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করব।
প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরের শাসনকালে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরে সৃষ্টি হয়েছিল সাফল্যের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ২০০৯ সালে আবার সরকারে এসে আমরা ওয়াদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নঅগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখি। ১৩ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ও মাথাপিছু আয় গত ১৩ বছরে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫শ ৫৪ ডলার। আইএমএফ-এর হিসাব মতে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হবে।১৩ বছর সময়কালে আমাদের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশ, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫.১ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজেট ছিল মাত্র ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৭ গুণ বেড়ে হয়েছে ৬ লক্ষ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
২০০৮-০৯ অর্থ বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় এবং প্রবাস আয় বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। ক্সবদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি, এতে ৯ মাসের আমদানী ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকের উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়েছি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা এবার ৮ গুণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা করেছি। এতে প্রায় এক-চতুর্তাংশ জনগোষ্ঠী সুবিধাভোগী।
২০০৫ সালে দরিদ্র ও হতদরিদ্রের হার ছিল যথাক্রমে ৪০ ও ২৫.১ শতাংশ, যা কমে বর্তমানে যথাক্রমে ২০.৫ ও ১০.৫ শতাংশ। আমাদের ইশতেহারে ঘোষণা ছিল-‘আমার গ্রাম-আমার শহর’। গ্রামের মানুষ নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে। উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও উপভোগ করছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছি। গ্রামেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি।
এদেশে কেউ গরীব-গৃহহীন থাকবে না। ১৯৯৬ থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি পরিবারকে বাসস্থান করে দিয়েছি। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে উপকারভোগী ৫৬ লাখ ৭৯ হাজার পরিবার।২০১০ হতে ২০২২ পর্যন্ত ৪০০ কোটি ৫৪ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি বই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছি। স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়।বিনামূল্যে ৩০ পদের ঔষধ পাচ্ছে। ১৩ বছরে ২২ হাজার ৬৬৪ জন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। আরও ৪ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিবো। ৩৫ হাজারের বেশী নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ দিয়েছি। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এখন পুষ্টি নিশ্চিত করতে কাজ করছি।
২০০৯-এর তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ গুণ বাড়ায় উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। ৯৯.৭৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপুল উন্নয়ন করেছি। আগামী বছরেই পদ্মা সেতুতে যান চলাচল করবে এবং মেট্রোরেলও চালু সম্ভব হবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, ক্সসয়দপুরে আঞ্চলিক বিমানবন্দর, কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং মাতারবাড়ি ও পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১৩ কোটি এবং মোবাইল সীম গ্রাহক ১৮ কোটিরও বেশি। ফাইভ-জি সার্ভিস চালু করেছি। ৫ হাজার ৮২০টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন এবং ৮ হাজার ৫শ’ টি ডাকঘরকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তরিত করেছি।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম, ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। দক্ষ ও সচেতন কর্মঠ যুবশক্তি গড়ে তুলতে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুবকদের সম্পৃক্ত করছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করব। সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি যাতে ১ কোটির বেশি কর্মসংস্থান হবে। করোনা অতিমারিতেও দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছি। মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। ১ লক্ষ ৮৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে প্রায় ১৩ কোটি ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। বুস্টার ডোজ প্রদানও শুরু করেছি।
বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়ন সহযোগীগণ সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। আমাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে, এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে।
২০২৬ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ কার্যকর হওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়ে যাব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা কাজে লাগাতে আমরা প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ অনেক মজবুত ও শক্তিশালী। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবই। আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা নিজস্ব অর্থ‣নতিক নীতিমালা নিয়ে কাজ করে।
২০২১-২০৪১ মেয়াদে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমরা ২০৩০ এর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন, ২০৩১-এর মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ এ উচ্চ আয়ের উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হতে চাই। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছি।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে টেকসই করতে একটি জাতীয় মসৃণ উত্তরণ কৌশল ((Smooth Transition Strategy) প্রণয়নের কাজ চলছে। এই জাতীয় দলিলে উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের দিক-নির্দেশনাসহ কার্যকর কৌশল থাকতে হবে। সম্যক গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে একটি প্রমাণনির্ভর সময়োপযোগী কার্যকর কৌশল প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাই।
আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবই। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিল। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। এই দেশে সকলেই উন্নত জীবন পাবে, বাংলাদেশ হবে বিশ্বে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সবাইকে ধন্যবাদ।
x

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মে দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এমএনএ জাতীয় ডেস্কঃ মহান মে দিবস আজ। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। এই দিবসটি ...