Don't Miss
Home / আজকের সংবাদ / আন্তর্জাতিক / চীন / করোনায় চীনে ১৭৬০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত, ৬ জনের মৃত্যু

করোনায় চীনে ১৭৬০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত, ৬ জনের মৃত্যু

এমএনএ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত চীন। শেষ খবর পর্যন্ত ভাইরাসটিতে ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত এসব রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করেছে বিশ্বের জনবহুল দেশটি। যথাযথ চিকিৎসায় সেরেও উঠছেন অনেকেই। তবে মানবতার ব্রত নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন ‘কোভিড-১৯’ নামের ভাইরাসটিতে। এ নিয়ে নতুন সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে চীনে। এতোদিন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য না জানালেও মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫শ’ হওয়ার পর আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করলো দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। গতকাল শুক্রবার সংস্থাটি জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৬০। পাশাপাশি প্রাণঘাতী ভাইরাসে মারাও গেছেন ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী।

আর গতকাল শুক্রবারও চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের। এর মধ্যে ১১৬ জনই হুবেই প্রদেশের। সব মিলিয়ে করোনা ভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫৩ জনে। নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪ হাজার ৮২৩ জন। ফলে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৪৯২। চীনের বাইরে ২৭টি দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাওয়া গেছে। আর চীনের বাইরে ফিলিপাইন, হংক ও জাপানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বা়ডছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তের পরিসংখ্যান সামনে আসায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিতদের পাশাপাশি চীনা প্রশাসনেও উদ্বেগ বাড়ছে।

গতকাল চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের উপপরিচালক জেং ইক্সিন বলেন, আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ১ হাজার ৫০২ জনই হুবেই প্রদেশের। মোট আক্রান্তের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যুর হার দশমিক ৪ শতাংশ। তবে তাদের সংক্রমণ হাসপাতাল থেকে নাকি সাধারণভাবে, তা তদন্ত ও গবেষণার বিষয়।

অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ‍হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা। একদিকে হাসপাতালে শয্যার সঙ্কট, অন্যদিকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের যথেষ্ট সরবরাহ নেই। এমনকি সার্জিক্যাল মাস্ক ও বিশেষ অ্যাপ্রোনেরও ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। মুখোশ, গ্লাভস, পোশাক ও নিরাপদ চশমার সঙ্কট দেখা দেয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনে একবার খাবার খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কারণ হাসপাতালে বারবার পোশাক, গ্লাভস, মুখোশ খুলে খেলে সংক্রমণ হতে পারে। এর আগে পোশাক সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের বড়দের ডায়াপার পরে থাকার খবরও প্রকাশিত হয়েছিল।

স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজির অধ্যাপক বেঞ্জামিন কাউলিং বলেন, আমি মনে করি এটা অত্যন্ত উদ্বেগের। উহানে এক একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে অনেক রোগীর দেখভাল করতে হচ্ছে। সেই চিকিৎসা করতে গিয়ে আক্রান্ত হলে সেটা খুবই ভয়ঙ্কর।

গার্ডিয়ানের খবর বলছে, গত ডিসেম্বরে উহানের সামুদ্রিক প্রাণী বেচাকেনার একটি বাজার থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ছয় চিকিৎসাকর্মী মারা গেছেন। এই প্রথমবারের ভাইরাস আক্রান্তের নথিতে পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে চীন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আডহানোম গেবরেইয়াসুস বলেন, এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। স্বাস্থ্যকর্মীরা হলেন এমন আঠা যারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জোড়া লাগিয়ে রাখেন। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা একসঙ্গে সাড়া দেন।

কাজেই কতসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন, সেই তথ্য আমাদের জানা দরকার। এমনকি কোন সময় ও পরিস্থিতিতে তাদের শরীরে এই প্রাদুর্ভাব ছড়িয়েছে, তাও জানতে হবে।

একই দিনে মিসরেও একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আফ্রিকার দেশগুলোতে এই প্রথম কোনো নাগরিক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।

মিসরীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি হলেন একজন বিদেশি। তাকে একটি হাসপাতালে আলাদা করে রাখা হয়েছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানোর পাশাপাশি সব ধরনের জরুরি পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।

কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি কোন দেশের নাগরিক কিংবা তার ব্যাপারে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। চলতি মাসের শুরুতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই ভাইরাস সংক্রমণে তাদের স্থাপনার সংকট রয়েছে বলেও সংস্থাটি জানিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ভাইরাসটি থেকে নিস্তার পেতে সুরক্ষা গাউন, গ্লোভস ও মাস্কের ঘাটতির মুখে বিভিন্ন অস্থায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে চীনের চিকিৎসক ও নার্সরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছেঁড়াখোঁড়া সুরক্ষা মাস্ক জোড়াতালি লাগিয়ে, একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়ার মতো গগলস ফের পরতে দেখা গেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। নিজেদের জুতা প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে নিচ্ছেন তারা। কারণ তাদের কাছে কোনো সুরক্ষা কাভার নেই।

কখনো কখনো নিজেদের টাকা দিয়ে সুরক্ষা পোশাক কিনতে দেখা গেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। দীর্ঘ সময় তাদের খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। কারণ ওয়াশরুমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে তাদের সুরক্ষা পোশাক খুলতে হবে। আর এগুলো একবার শরীর থেকে সরিয়ে ফেললে দ্বিতীয়বার পরার যোগ্য থাকছে না।

চীনসহ কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু সুরক্ষা পোশাক পেতে চীনা হাসপাতালগুলোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ) বলেছে, উহানের নিজইনটান হাসপাতালে তারা সাড়ে তিন টন চিকিৎসা বিষয়ক সুরক্ষা যন্ত্র পাঠিয়েছে। করোনাভইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই হাসপাতালটি সামনের সারিতে রয়েছে।

ভাইরাসটি সংক্রমণ রোধে চীনের বেশ কয়েকটি শহর অচল করে রাখা হয়েছে। কিন্তু মাস্ক, গ্লোভসহ সুরক্ষা যন্ত্রপাতি(পিপিই) উৎপাদন ও সরবরাহও বেশ বাধাগ্রস্ত হতে দেখা গেছে। এমনকি সব চেয়ে প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতেও এসব যন্ত্র ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছে না।

চিকিৎসকরা এখন যেভাবে কভিড-১৯ ভাইরাসটি নির্ণয় করছেন, পরিবর্তিত সেই উপায় নিয়ে চীনের কাছে আরও তথ্য চেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এতে গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নতুন উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে। হুবাই প্রদেশের অতিরিক্ত পনেরো হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসব রোগী সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়েছে, কোনো ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে না।

বর্তমানে ৬৬ হাজার ৪৯২ রোগীকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। আর এতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক হাজার ৫২৩ জন।

x

Check Also

এমভি আবদুল্লাহ

২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ এক মাস পর মুক্ত

এমএনএ জাতীয় ডেস্কঃ দীর্ঘ একমাস বন্দিদশার পরে অবশেষে মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে জলদস্যুদের হাত থেকে ছাড়া ...