এমএনএ রাজনীতি ডেস্ক : কার স্বার্থে বিডিআর বিদ্রোহের সঠিক বিষয়গুলো জানানো হচ্ছে না এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শনিবার দুপুরে বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।বর্তমান সরকার দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, এরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, পুরো সমাজকে আজ ধ্বংস করেছে। লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশকে পর নির্ভরশীল, নতজানু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা। মাথা তুলে যেন দাঁড়াতে না পারে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের যে তদন্ত হলো, যেটা সেনাবাহিনী করেছিল, তার আংশিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। মূল অংশটাই প্রকাশ করা হয়নি। যেটা বেসরকারিভাবে করা হয়েছিল, সেটাও প্রকাশ করা হয়নি। কেন, কার স্বার্থে ১৩ বছর ধরে আমরা সঠিক বিষয়গুলো জানতে পারছি না?
তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বাংলাদেশের যেটা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার একটা গভীর চক্রান্ত হয়েছে। আমাদের চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মধ্য দিয়ে সেনা বাহিনীর মনবল ভেঙে দেওয়ার একটা গভীর চক্রান্ত হয়েছে সুদূর প্রসারী। অতীতে বিডিআর-এ যারা ছিলেন তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম যে যোদ্ধারা সামনে এগিয়ে আসে, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার চেষ্টা করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পরে তাদের বেশির ভাগই বিডিআর-এর সদস্য ছিল।
সেই শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য, তাদের মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য, তারা যেন কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য কোনো উদ্যোগী বা সাহসী ভূমিকা নিতে না পারে এটা ছিল তারই চক্রান্তের অংশ। এটা ফলশ্রুতি আমরা এখন দেখছি। আমাদের সীমান্তে হত্যা হয়, আমরা ঠিক সেভাবে জবাব দিতে পারি না। আমাদের জনগণের ওপর অন্যায়-অত্যাচার হয়, সেখানে তারা সে ভূমিকা পালন করতে পারে না—বলেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতারা কতগুলো প্রশ্ন তুলেছেন। যে প্রশ্নগুলো সমগ্র জাতির। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, একটি অদৃশ্য বৃহৎ শক্তি বাংলাদেশকে দুর্বল করে রাখার জন্য, নতজানু করে রাখার জন্য সব সময় নানা কৌশল করে বাংলাদেশের ওপর চড়াও হয়ে বসেছে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ যে সরকার আছে, এই সরকার সম্পূর্ণভাবে একাত্ম হয়ে তাদের লক্ষ্যগুলোকে চরিতার্থ করার জন্য কাজ করছে।
দেশের স্বাধীনতা-সার্বোভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব কিছু সংকটের মূল একটা—এ দেশের গণতন্ত্রহীনতা। সরকারে এমন যারা বসে আছে তাদের জনপ্রতিনিধিত্ব করার কোনো কিছু নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। সেই কারণে আমরা বারবার বলে আসছি, আজ ভয়াবহ একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি এই দেশের ওপর চেপে বসে মানুষের সব অধিকারগুলো হরণ করে নিচ্ছে। এমনকি বিশ্বের কাছে আমাদের চিহ্নিত হতে হচ্ছে, গণহত্যার সঙ্গে আমাদের সরকার জড়িত, মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করার সঙ্গে জড়িত। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এ সরকারকে দায়ী করেছে, একটি প্রতিষ্ঠান ও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। একটা স্বাধীন বাংলাদেশ, ৫০ বছরে এ ধরনের লজ্জার মুখোমুখি আমরা হইনি।
সেই কারণে আমাদের প্রয়োজন ইস্পাত কঠিন গণঐক্য গড়ে তোলা। সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে, দেশপ্রেমিক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ করে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদের পরাজিত করতে হবে। সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মোহাম্মদী নিউজ এজেন্সী নিউজ – ফিচার – ফটো নেটওয়ার্ক

