এমএনএ জীবনচর্চা ডেস্কঃ দেশে বেশিরভাগ নারীই তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন। পিরিয়ড/ মাসিকের সময় নারীকে তার শরীরের প্রতি বেশি যত্নবান হতে হয় । এ সময় তার শরীর থেকে প্রচুর পরিমান আয়রন ক্ষয় হয়। এ ঘাটতি পূরণে পুষ্টকর খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, পিরিয়ডের সময় পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হলে তাতে রক্তশূন্যতা থেকে আরও গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
মাসিক হওয়ার কারণে প্রতিদিন খাবারের ‘বিশেষ কোনো পদ’ নিয়ে আলাদা করে ভাবা হয় না বলে জানিয়েছেন নানা বয়সী ও পেশার নারীরাও।
বিশেষ এই দিনগুলোতে ‘অরুচি’ থাকায় খাবার নিয়ে মাথা ঘামান না উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রুবা হাসান।
“সাধারণ সময়ে যা খাই, তাই খাওয়া হয় এই দিনগুলোতেও। মেনুতে খুব একটা পরিবর্তন থাকে না। তবে কখনও খুব বেশি দুর্বল লাগলে ডিম-দুধ খাই। তাছাড়া আলাদাভাবে এই সময়ের জন্য কখনও বিশেষ মেনুর আয়োজন করা হয় না।”
দুর্বল বোধ করলে স্মৃতি বৈরাগীর পরিবার ‘এটা-সেটা’ খেতে পীড়াপীড়ি করে তাকে। কিন্তু কন্যা ও অফিস সামলে নিজের দিকে আর খেয়াল রাখা হয়ে ওঠে না তার।
মাসিকের দিনে ভাজা-পোড়া খাওয়া একদমই ঠিক নয়। আমাদের দেশের মেয়েরা এখনও খাবারের ব্যাপারে উদাসীন। কোনটা দরকারি জানার পরেও তারা তা খায় না বা অতটা গুরুত্ব দেয় না।
কারও কারও এ সময় বদহজম, পেটের সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাছাড়া এই সময়ে শরীর খানিকটা দুর্বল থাকে। খাবারের মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করা উচিত। তা না হলে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়, যা তাদের উপর স্থায়ী প্রভাব রাখে।
মেয়েদের স্বাভাবিক এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় স্তন, পেট, কোমর ও বিশেষ করে তল পেটে ব্যাথা অনুভূত হয়; ক্ষুধা কমে যাওয়া, বিষন্নতাও দেখা দেয়।
একই সঙ্গে পিরিয়ড ও গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথাতেও অনেক মেয়ে ভুগতে পারেন; দেখা দিতে পারে মাইগ্রেন ও মুড সুইং। এসবেরও উপশম হতে পারে সঠিক খাদ্য গ্রহণে। ফাস্ট ফুড কখনই পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নয়। ফাস্ট ফুডপ্রেমী অনেকে এই সময়ে মাংসের বার্গার খাওয়াকে ভালো উপায় মনে করেন; কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কারণ এতে ভিটামিন সি নেই এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের বদলে থাকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান।
পিরিয়ডের সময় পুষ্টিকর খাবার নিয়ে অবহেলা হলে গর্ভধারণের সময় নানা জটিলতার মুখেও পড়তে হয় নারীকে।
বিশেষত মাসিক হওয়ার কারণেই লোহা, ভিটামিন বি-৯ ও বি-১২ এবং ফোলায়েট রয়েছে এমন খাবার নিয়মিত খেতে হবে সব বয়সী নারীকে।
কলিজা মেয়েদের জন্য ‘আদর্শ’ খাবার। নারীর বিশেষ পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মৌসুমি ফল খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
কলিজায় ভিটামিন বি-৯, লৌহ ও ফোলায়েট থাকে, যা শরীরের ঘাটতি পূরণ করে। অনেকে পিরিয়ডের সময় মাছ-মাংস খেতে চান না, তাদের উচিত বেশি বেশি ফল-সবজি, বাদাম, দুধ ও আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া। প্রতিদিনের খাবারে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার দুধ রাখা উচিৎ; তাহলে দেহে লৌহের চাহিদা অনেকটা পূরণ হয়।
খাবারে খেজুর, কিসমিস রাখার কথা জানিয়ে আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এসবের পাশাপাশি খেতে হবে লেবু। কারণ লেবু দেহে লৌহের শোষণ বাড়ায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার বার টয়লেটে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে মেয়েরা এ সময় পানি কম পান করেন। এতে করে স্বাস্থ্য জটিলতাই বাড়বে।
মাসিকের দিনে মেয়েদের কোমল পানীয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “এই সময় কুসুম গরম পানি পান করলে পেটে আরাম অনুভূত হয়।”
পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে হিমোগ্লোবিন, আয়রন ও জলীয় উপাদান বের হয়ে শরীর দুর্বল করে ফেলে।
নারীর শরীরে এই ঘাটতি থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকটি তুলে ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের পুষ্টি ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরে খাবারে পূরণ না হলে নারীর অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
অনেকের দীর্ঘদিন মাসিক হওয়া অতিরিক্ত লৌহ ক্ষয়ের কারণ। আমরা এমন অনেক রক্তশূন্যতার রোগী পেয়েছি যারা মনে করে থাকেন তাদের মাসিক স্বাভাবিক; কিন্তু এদের অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না যে হয়ত তাদের মাসিকের মেয়াদ ঠিক আছে কিন্তু পরিমাণটা সাধারণের চেয়ে অনেক।
অনেকের মাসিক স্বাভাবিক ভেবে যে পরিমাণ খাবারের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকেন তা হয়ত তার জন্য যথেষ্ট নয় কারণ তার শরীরে ঘাটতিটা বেশি হয়েছে। ছয় মাস বা এক বছর পরে এসে তার শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণে হিমোগ্লোবিনটাও কমে যায়।
অধিকাংশ নারী অ্যানিমিয়া রোগীর বেলায় তার পিরিয়ড স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হয়।
অ্যানিমিয়ায় ভোগা নারী পিরিয়ডের সময় আরও বেশি দুর্বল বোধ করেন। আর দীর্ঘদিনের রক্তশূন্যতা থেকে হৃদরোগে রোগীর মৃত্যুর শঙ্কাও আছে।
মাসিক স্বাভাবিক থাকলে খাবারের মাধ্যমে লৌহে ঘাটতি পূরণ করা গেলেও কোনোভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে ওষুধের বিকল্প নেই।
যতই লৌহ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হোক না কেন, দেহে দৈনিক তা এক মিলিগ্রামের বেশি শোষিত হয় না।
তাই মাসে কারও যদি ৩০-৪০ মিলিগ্রামের বেশি লৌহ শরীর থেকে বের হয়ে যায়, তা খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ওষুধ খেতে হবে।