Don't Miss
Home / নির্বাচনী হালচাল / প্রেস্টিজ রক্ষার লড়াইয়ে লাঙ্গল-নৌকা-ধানের শীষ

প্রেস্টিজ রক্ষার লড়াইয়ে লাঙ্গল-নৌকা-ধানের শীষ

এমএনএ ডেস্ক রিপোর্ট : রংপুর সিটি কর্পোরেশনে (রসিক) নির্বাচনী প্রচার শেষ। এখন ভোট গ্রহণের পালা। রসিক নির্বাচনে প্রেস্টিজ রক্ষার লড়াইয়ে লাঙ্গল-নৌকা-ধানের শীষ উঠে পড়ে লেগেছে। এখন অপেক্ষা করে দেখার পালা কোন দলের প্রার্থীকে বেছে নেয় রংপুর সিটি কর্পোরেশনবাসী।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হয় শেষ মুহূর্তের জমজমাট প্রচার। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীরা ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রংপুরে এই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘ নয় বছর পর নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষ প্রতীকের সরাসরি লড়াই দেখতে যাচ্ছে নগরবাসী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন দলের নেতারাই নির্বাচনকে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে দেখছেন। তাই তিন দলের শীর্ষ নেতারা এখন রংপুরে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন রংপুরে অবস্থান করছেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব উপস্থিতির কারণে স্থানীয় এ নির্বাচনে রীতিমতো জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে কেন্দ্রীয় নেতারা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রচারের শেষদিন গতকাল মঙ্গলবারও তিন দলের প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা যায়। ভোটারদেরও প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বিচার-বিশ্লেষণ করতে দেখা যায়। রংপুরের অফিস-আদালত, চায়ের আড্ডা, মাঠে-ঘাটে আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে রসিক নির্বাচন।
নির্বাচন নিয়ে কথা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. তুহিন ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, অনেক বছর পর রংপুর সদর এলাকায় একই সঙ্গে নৌকা, লাঙ্গল ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এতে ত্রিপক্ষীয় লড়াইয়ের আভাস পাচ্ছি। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এটি স্থানীয় নির্বাচন হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সরগরম উপস্থিতিতে প্রমাণ করেছে এটি জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রচারের শেষদিনে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দীন আহম্মেদ ঝন্টু বেলা ১১টায় নগরীর গুপ্তপাড়ার বাড়ি থেকে বের হন। পরে তিনি তাঁতীপাড়া, কামালকাছনা, বৈরাগীপাড়া, পান্ডারদিঘী ও লালবাগ এলাকায় প্রচার চালান। তিনি নগরীর বেতপট্টির দলীয় কার্যালয়ে যান। ঝন্টু বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে সকালে নগরীর কলেজ রোড শান্তিবাগ এলাকার বাড়ি থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারে বের হন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তিনি কাচারিবাজার, শহীদ জররেজ মার্কেট, পায়রা চত্বর আজিজ মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে খ্যাত রংপুর অঞ্চলে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত শক্তিশালী করতে ভোট চেয়েছেন দলটির মেয়র প্রার্থী মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
বিএনপির প্রার্থী মো. কাওছার জামান বাবলা জুম্মাপাড়া, জলকর, জলচ্ছত্র, গুপ্তপাড়া এলাকায় প্রচারণা চালান। অপরদিকে আওয়ামী লীগের শাসনামলকে ‘দুঃসহ’ এবং সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে নগরবাসীকে এর বিরুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মো. কাওছার জামান।
কথা হয় লালবাগ এলাকার দিনমজুর আবদুল মজিদের সঙ্গে। নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাহে ভোটের কী আর জানবার চান। ভোটত যায় জেতে তায় হ্যামার গরিবের কথা ভুলি যায়। এলাকার ভোটত দেখি কোনো গণ্ডগোল এলাও হয়নি। ভোটত ভালোই হইবে মনে হয়।’

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নগরীর অলিগলি সর্বত্রই পোস্টার ও প্রতীকের ছড়াছড়ি। প্রার্থীদের মাইকিংয়ে পুরো নগরী উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নিয়েছে। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। এদিকে ভোট সামনে রেখে নগরীতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং নগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেও আচরণবিধি লংঘনের দৃশ্য দেখা গেছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ হলেও মোটরসাইকেল মহড়া ও মিছিল করতে দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভোটের পরদিন ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নগরীতে মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ রয়েছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অত্যন্ত ভালো রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রয়েছে। আমরা ভোট গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আজ বুধবার নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে পরিবেশ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের নলেজে বিষয়টি আসেনি। নগরীতে টহল আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাউন্টডাউন আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে নির্বাচন হওয়ার কথা। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের চেষ্টা করছে। রংপুর সিটি নির্বাচন দলগুলোর জন্য এসিড টেস্ট।
আচরণবিধি লংঘনের হিড়িক : গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আ’লীগ প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টুর নেতৃত্বে শহরে শতাধিক মোটরসাইকেল, গাড়ি, ইজিবাইক নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। পায়রা চত্বর থেকে মিছিলটি জাহাজ কোম্পানির মোড় হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
শেষদিনের প্রচারেও নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা লংঘনের ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে পায়রা চত্বরে নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিয়ে প্রায় একশ’ নেতাকর্মীর মিছিল যেতে দেখা গেছে। বিকাল ৪টার দিকে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে নৌকার মোটরসাইকেল মহড়া হয়। কলেজ রোডে লাটিম প্রতীকের পক্ষে মোটরসাইকেল মহড়া দেখা যায় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের।
এক নজরে রসিক নির্বাচন : দশম সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। রংপুর পৌরসভা এবং জেলা সদর, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত।
আগামী ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে। এতে মেয়র পদে সাতজন, ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ জন ও সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এতে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। এতে মোট ১৯৬টি ভোট কেন্দ্রে ১ হাজার ১৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ জন। এর আগে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট হয়।
চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : নির্বাচনকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নিরাপত্তার চাদরে পুরো এলাকা ঢেকে ফেলা হয়েছে।
নির্বাচনে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসারসহ ৭ হাজার সদস্য থাকছে। চারটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রিজার্ভ হিসেবে রাখা হবে, যাতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোতায়েন করা যায়। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
ইসি জানিয়েছে, সাধারণ কেন্দ্রের পাহারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২২ জন সদস্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। আলাদাভাবে র‌্যাব ও পুলিশেরও টহল টিম মাঠে রয়েছে।
x

Check Also

বিশ্বের যেসব দেশে এখনও হানা দেয়নি করোনা ভাইরাস

এমএনএ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : নভেল করোনা ভাইরাসে নাজেহাল গোটা বিশ্ব। চীন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন ...