Don't Miss
Home / জাতীয় / সরকার / বিএনপির মুখে ভারত বিরোধিতার কথা মানায় না : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির মুখে ভারত বিরোধিতার কথা মানায় না : প্রধানমন্ত্রী

এমএনএ রিপোর্ট : ভারত ইস্যুতে বিএনপির দ্বৈত-নীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে ভারতের কাছে দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেখা দিয়ে ক্ষমতায় আসলেও তারা আজ ভারত বিরোধিতার কথা বলছেন। ভারত বিরোধিতার কথা বিএনপির মুখে মানায় না।

প্রধানমন্ত্রী তার আসন্ন ভারত সফরকালে সম্ভাব্য ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি সম্পর্কে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, যারা ভারতের কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারেনি, তারাই এখন ভারতবিরোধী কথা বলছে। মুখে ভারতবিরোধিতা করলেও ক্ষমতায় থাকতে ভারতের দালালি করেছে। এটিই তাদের দ্বিমুখী রাজনীতি। এসব খেলা বহু খেলেছে তারা। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারাতে ভারতের ‘র’ এবং আমেরিকার সঙ্গে বিএনপি জোট বেধেছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুব মহিলা লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেইনি বরং চেয়েছিলাম আমার দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগবে, ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে। তারপর আমরা ভেবে দেখবো বিক্রি করবো কি করবো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন শুনি খুব ভারত বিরোধী কথা। আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন আমেরিকান কোম্পানি আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে চাইলো ভারতের কাছে, তখন এই গ্যাস বিক্রির মুচলেখা দিয়েছিল কে?

শেখ হাসিনা বলেন, এখন ভারত বিরোধী কথা বললেও আমেরিকান অ্যাম্বেসির লোক, ‘র’-এর লোকেরা তো হাওয়া ভবনে বসেই থাকতো এবং সেই নির্বাচনটায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে হারাবে আর এখান থেকে গ্যাস নেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন আমি বলেছিলেন যে, তারা গ্যাস পাবে না, আল্লাহতায়ালাই গ্যাস দেবে না। বিক্রি তো দূরের কথা এবং তাই হয়েছে- গ্যাস পায়নি, দিতেও পারেনি।

‘কিন্তু মুচলেখা তো দিয়েছিল, আজকে তাদের মুখে এতো ভারত বিরোধী কথা!’ উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, ভারতে গিয়ে উনি (খালেদা জিয়া) বেশ ঘুরে টুরে আসলেন। যখনই এখানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলো গঙ্গার পানির কি হলো ? উনি বললেন, গঙ্গার পানির কথা, ওহো ওটা বলতে তো তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বিরোধী কথা বললেন, এর আগে তিনি গঙ্গার পানি আদায়ের জন্য ফারাক্কা পর্যন্ত লং মার্চ, আন্দোলনও করেছিলেন, কিন্তু ভারতে গিয়ে তিনি গঙ্গার পানির কথা ভুলেই গেলেন!

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘তাহলে দালালিটা করে কে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে আমরা কিন্তু গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সীমানা চুক্তি এবং সমুদ্র চুক্তি করে যান, কিন্তু জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া- যারাই ওই সময় ক্ষমতায় ছিল তারা কখনও এসব চুক্তির কথা একবারের জন্য বলেনি, সাহসও পায়নি। দালালি এমনভাবে ছিল যে, এটা করবার জন্য সে কথা তারা উচ্চারণও করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬৪ হাজার শরণার্থী আমাদের ভারতে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের। আমি সরকারে এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করে সেসব শরণার্থীদের ফিরিয়ে এনেছি। বলা হয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হলে ফেনী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব নাকি ভারত হয়ে যাবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তিতেও তারা বাধা দিয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ভারতের কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারেনি তারাই আবার ভারত বিরোধী কথা বলছে। আমি একটা কথাই বলব, এ সমস্ত খেলা তারা অনেক খেলেছে। তাদের কোন দেশপ্রেম নেই। ক্ষমতাটা তাদের কাছে ভোগের বস্তু। কারণ তারা যে যখনই ক্ষমতায় এসেছে, অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। কিছু মুষ্টিমেয় লোককেও অর্থ সম্পদের মালিক করেছে এবং তাদের জোরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে।

জিয়া থেকে শুরু করে সবাই এটাই করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জিয়ার সম্পদ সম্পর্কে মিডিয়ায় অপপ্রচার প্রসঙ্গে বলেন, প্যারিস থেকে স্যুট আসতো (জিয়ার), জুতা আসতো। আর কোথা থেকে কোথা থেকে নানাকিছু আসতো। আর মরে যাবার পর প্রচার হলো কি জিয়া কিছুই রেখে যায়নি। কেবল ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।

তিনি বলেন, জিয়া মারা যাবার পর ৪০ দিন দিনরাত বিটিভিতে এগুলো প্রচার করা হলো। দামী বেড কাভারেরও ওপরে ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি। বাকী আর বলতে চাইনা, যা যা ছিল। হাওয়া ভাবন, গাজীপুরের খোয়াব ভবন। মায়ের ভাগ ফালুর কাছে পুত্রের ভাগ মামুনের কাছে। এভাবে শুধু দুর্নীতিই করে গেছে দেশের কোন উন্নয়ন করেনি।

আন্দোলনের জন্য রাজপথে নামার বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা নাকি ভয়ে রাস্তায় নামতেই পারেন না! এতই যদি ভয় থাকে, তাহলে রাজনীতি করা কেন? অবশ্য এটা তাদের অভ্যাস।

বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মাঝেমাঝে বিএনপি নেতারা খুব অভিযোগ করেন, হামলা-মামলার কারণে তারা না-কি ঘরেই থাকতে পারেন না। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াতের গুন্ডাবাহিনী ও পুলিশ কীভাবে আমাদের নেতাকর্মী ও মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছিল!

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে রাজপথে যুব মহিলা লীগ নেতাকর্মীসহ নারীদের ওপর নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা না-কি তাদের (বিএনপি) নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছি। আজ আমরা ক্ষমতায় আছি। কই, বিএনপির নেতাকর্মী কিংবা মহিলাদের ওপর নির্যাতন করি না। করলে তো করতে পারি, করতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করি না।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আজ তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। জিয়াউর রহমান তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন। তাদের যে নির্বাচনের ইতিহাস! এদেশে কবে, কখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা করেছে বা করতে পেরেছে? তাদের ইতিহাসে তা নেই। তাদের ইতিহাসে আছে ভোট কারচুপি, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপিয়ে সিল মারা অথবা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ভোটের ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়া।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বাধন করেন।

এর আগে সম্মেলনস্থলে পৌঁছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল। এ সময় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।

সম্মেলনমঞ্চে আসনগ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উত্তরীয় ও ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্টও দেওয়া হয়।

এরপর দলীয় সঙ্গীত ও বর্ণাঢ্য গীতিনৃত্যনাট্য পরিবেশন এবং যুব মহিলা লীগ সৃষ্টির পর থেকে এর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আন্দোলন-সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়।

জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং গণআন্দোলনে আত্যাহুতিদানকারী যুব মহিলা লীগ নেতা-কর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনকে ঘিরে যুব মহিলা লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও উৎসবের আমেজ দেখা দেয়। সারাদেশের সব জেলা-উপজেলা থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটস সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনস্থলকেও বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালের ১৬ মার্চ সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল।

যুব মহিলা সভাপতি নাজমা আকতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাত জাহান নাসরীন। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা এমপি ও যুব মহিলা লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি জাকিয়া পারভীন মনি। পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা ও প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন।

x

Check Also

ব্যাংকের লাভ-ক্ষতির হিসাব তৈরির সুুযোগ জুন পর্যন্ত বাড়লো

এমএনএ অর্থনীতি রিপোর্ট : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে বার্ষিক আর্থিক লাভ-ক্ষতির ...