নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার বিচারে আদালত কক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন।ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মামলার শুনানিতে সাংবাদিকদের উপস্থিতিই কাম্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিচারের স্বচ্ছতা যেন কোনভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ নয়।
জানা যায়, গত সোমবার এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আগে আসামিপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে একজোট হয়ে আদালত কক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি)। প্রকাশ্য আদালতের বিচারব্যবস্থায় এমনটি ঘটার কথা নয়। একমাত্র ক্যামেরা ট্রায়াল তথা গোপনে বিচার হলে আদালত সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন। তবে সেই ক্ষমতা পিপির নেই। আইনমন্ত্রীও সেটা স্পষ্ট করে বলেছেন। উল্লেখ্য, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারায় বিচার প্রক্রিয়ার বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘কোনো অপরাধের তদন্ত বা বিচারের উদ্দেশ্যে যে স্থানে কোনো ফৌজদারি আদালতের অধিবেশন বসে, সেই স্থানকে উন্মুক্ত আদালত বলিয়া গণ্য করিতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে সুবিধাজনক স্থান সংকুলান হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকিতে পারে।’ তা সত্ত্বেও সাত খুন মামলার বিচারে আদালত কক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কেন বের করে দেয়া হল সেটাই প্রশ্ন।
২০১৪ সালের এপ্রিলে সংঘটিত নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা দেশব্যাপী তুমুল আলোড়ন তুলেছিল। এত বেশিসংখ্যক ব্যক্তিকে একসঙ্গে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার ঘটনা এর আগে আর কখনও ঘটেনি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতার খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর দেশবাসী বিস্ময়ে ফেটে পড়েছিল। অভিযুক্ত র্যাবের এক কর্মকর্তা এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর জামাতা হওয়ার কারণে এমনও সন্দেহ করা হয়েছিল যে, এই হত্যাকাণ্ডের বুঝি সুষ্ঠুু বিচার হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে- এটা স্বস্তির বিষয়। ভারতে গ্রেফতারকৃত মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেনকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন সবার প্রত্যাশা, এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
বলাবাহুল্য, আদালত কক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার ঘটনায় এ নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। মামলাটির দুই প্রধান আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ নিঃসন্দেহে সমাজে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি। জনমানসে এমন একটা ধারণা রয়েছে যে, প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা কোনো অপরাধ করলে সাধারণত তাদের বিচার হয় না। আলোচ্য মামলাটি যেহেতু এখনও বিচারাধীন, তাই এ নিয়ে মন্তব্য করা চলে না, তবে বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো মহল যাতে প্রভাব ফেলতে না পারে- সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে সবাইকে।
-সম্পাদক