Don't Miss
Home / জাতীয় / বিবিধ / বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস আজ

বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস আজ

এমএনএ রিপোর্ট : আজ ২১ মার্চ। বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস। বাংলাদেশে ৫ম বারের মতো ও বিশ্বে ১০ম বারের মতো পালিত হচ্ছে পালিত হচ্ছে বিশ্বে ডাউন সিনড্রোম দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে— ‘আমার সমাজের জন্য আমি কি করছি’ (হোয়াট আই ডুয়িং টু মাই কমিউনিটি)।
এ বছর দিবসটি উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ ও ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি অব বাংলাদেশ ও জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১ম বারের মতো দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
ডাউন সিনড্রোম একটি শিশুর বংশানুগতিক সমস্যা। মানবদেহের ২১তম ক্রোমোজোম জোড়ায় অতিরিক্ত একটি ক্রোমোজোমের উপস্থিতির কারণে এটি হয়ে থাকে। এর ফলে মৃদু বা গুরুতর মাত্রার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, দুর্বল পেশীক্ষমতা, খর্বাকৃতি ও মঙ্গোলয়েড মুখাকৃতি পরিলক্ষিত হয়।
বাড়ছে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ১৫টি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু। এই হিসেবে বছরে জন্ম নিচ্ছে পাঁচ হাজারের বেশি ডাউন সিনড্রোম শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মায়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। এ ছাড়া আমেরিকায় প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার ডাউন শিশুর জন্ম হয়।
বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক হিসেবে, প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন শিশু জন্ম নেয়। বর্তমানে দেশে ২ লাখ ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তি আছে। আর প্রতিদিন জন্ম নেয় প্রায় ১৫টি।
ডাউন শিশুরা সাধারণত আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী শিশু হিসেবে বেঁচে থাকে। তবে সঠিক যত্ন নিলে শিশুরা অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো পড়ালেখা করতে পারে ও উচ্চ শিক্ষিত হয়ে পেশাগত জীবনেও সফল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাউন সিনড্রোম শিশুদের সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে। তাদের আমরা বোঝা মনে করলেও তারা আসলে সমাজের বোঝা না।

শিশু বয়সেই সময় দিয়ে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করলে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। বিশেষ করে পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ এবং ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর করা যায়।
বিশেষঞ্জ চিকিৎসকরা জানান, ডাউন সিনড্রোম কোনো রোগ নয়, বরং এটি আমাদের শরীরের জেনেটিক পার্থক্য এবং ক্রোমজমের একটি বিশেষ অবস্থা। গর্ভাবস্থায় শিশুর শরীরের কোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত হয়, যা জন্মগতভাবে একটি অতিরিক্ত ক্রোমজম প্রতিটি দেহকোষের ক্রোমজমে অবস্থান করে।
সাধারণত ৩৫ বছরের পর থেকে গর্ভধারণে এর ঝুঁকি বাড়তে পারে, তবে কম বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রেও লক্ষণীয় মাত্রায় ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্ম নিচ্ছে। তবে বিভিন্ন পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে ডাউন শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।
ডাউন সিনড্রোম শিশু ও ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা, অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থা এর সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাঙ্গডন ডাউন ১৮৬৬ সালে এ শিশুদের চিহ্নিত করেন বলে তার নামানুসারে ‘ডাউন সিনড্রোম’ কথাটি প্রচলিত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যত বেশি বয়সে মা হবেন, সন্তানের ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মের আশঙ্কা তত বেশি। ২৫ বছর বয়সী প্রতি ১ হাজার ২শ গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজন, ৩০ বছর বয়সী প্রতি ৯শ জনের মধ্যে একজন, আর ৪০ বছর বয়সী প্রতি একশ মায়ের মধ্যে একজনের ডাউন শিশু হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতালের নিউরো সার্জিকেল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার জানান, অসচেতনতার কারণেই দেশে ডাউন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আশার কথা, গর্ভবতী নারীর শরীর পরীক্ষা করে, এখন দেশেই ডাউন শিশু শনাক্ত করা সম্ভব। ডাউন শিশুরা সাধারণত প্রতিবন্ধী শিশু হিসেবে বেঁচে থাকে। তারা অন্য শিশুদের তুলনায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে দেরিতে বেড়ে ওঠে।
তিনি আরো জানান, এ ছাড়া ডাউন শিশুর শারীরিক জটিলতায় ভুগে। বেশির ভাগ ডাউন শিশুর জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকে, যার কারণে অনেকেই জন্মের পর মারা যায়। কারো কারো হার্টের অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
শুধু তাই নয়, ডাউন শিশুদের অনেকেই লিউকেমিয়া, থায়রয়েড সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণ-শক্তির সমস্যা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, জীবাণু সংক্রমণ, শারীরিক স্থ‚লতা ইত্যাদি জটিলতায় ভুগতে পারে। ডাউন শিশুদের গড় আয়ু সাধারণ মানুষের চেয়ে কম।
ডা. গোপেন কুমার জানান, যেহেতু মায়ের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাউন শিশু হওয়ার ঝুঁঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে ৩৫-এর বেশি বয়সে মা হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মায়ের আগের বাচ্চাটি যদি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকে তবে পরবর্তী সময়ে বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সরদার এ. রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, এ দিবসটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে এসব শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।
এ ছাড়া আমাদের দেশে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হার সম্পর্কে কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সাধারণত চাপা মুখ, চিবুক, ঘাড় ও চোখ ছোট হয় এই শিশুদের। অন্যদের তুলনায় এরা দেরিতে বসে, হামাগুড়ি দেয় ও হাঁটে। কথাও বলে দেরিতে। সব মিলিয়ে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়।
অথচ অনেক অভিভাবক জানেন না, ডাউন সিনড্রোম সন্তানের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হবে, কীভাবে তাকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো গড়ে তুলতে হয়। সঠিক যতœ, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ এবং ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোম শিশু স্বাভাবিক শিশুর মতো পড়ালেখা করে স্বনির্ভর হতে পারে।
x

Check Also

ডিজি

স্বাস্থ্যে অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক হলেন ডা. খুরশীদ আলম

এমএনএ বিশেষ রিপোর্টঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি ...