Don't Miss
Home / আজকের সংবাদ / আন্তর্জাতিক / ভারত / ভারতে ‘ধর্মগুরু’ দোষী সাব্যস্ত, সহিংসতায় নিহত ৩১

ভারতে ‘ধর্মগুরু’ দোষী সাব্যস্ত, সহিংসতায় নিহত ৩১

এমএনএ ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : দুই অনুসারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ভারতের আলোচিত স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক ‘ধর্মগুরু’ গুরমিত রাম রহিম সিং। আজ শুক্রবার সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন। আগামী সোমবার তাঁর সাজা ঘোষণা করা হবে। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে রাম রহিমের সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরপরই সহিংসতা শুরু করেন রাম রহিম সিংয়ের ভক্তরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

রায় ঘোষণার আগে থেকেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য জুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। একইসঙ্গে এলাকাগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। রাম রহিম সিংয়ের ভক্তরা বিক্ষোভ শুরু করলেই পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

সহিংসতা শুরুর আশঙ্কায় আজ শুক্রবার সকাল থেকেই পঞ্চকূলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে মোতায়েন করা হয় ৫০ হাজার পুলিশ। নিহতের ঘটনা ঘটেছে ওই এলাকাগুলোতেই।

১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর ও হনুমানগড়ে। পুলিশ একটি স্টেডিয়ামও অধিগ্রহণ করে রেখেছে বহু লোককে গ্রেপ্তার করার আশঙ্কায়।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার পর অপরাধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন রাম রহিম। দেশটির হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ এরই মধ্যে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। একটি হেলিকপ্টারে করে আদালত থেকে তাঁকে রোহতাক কারাগারে নেওয়ার কথা রয়েছে।

প্রায় ১৫ বছর আগে, ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেটাও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে। ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই নারীকে তিনি ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলার সূত্রে বলা হয়, ২০০২ সালে রাম রহিমের এক সাবেক নারী অনুসারী এ মামলা করেছিলেন। ওই নারীর অভিযোগ, হরিয়ানার শহর সিরসায় দেরা সাচা সৌদা গোষ্ঠীর প্রধান কার্যালয়ে রাম রহিম তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন করেন। এ মামলার পর রাম রহিমের অজস্র অনুসারী ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন।

২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রায় ২০০টি শুনানির পর এ মামলার রায় দেওয়া হলো। আজ ২৫ আগস্টের রায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ধর্মগুরুকে। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্যবার উচ্চ আদালত এ মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবারের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ, সংশ্লিষ্ট এলাকা ও পুরো পঞ্চকূলা শহরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং তাদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এমনকি সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রায় শোনার জন্য নিজের সাংগঠনিক দপ্তর থেকে মোট ২০০টি গাড়ির এক বিশাল বহর নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন রাম রহিম। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতে চত্বরে প্রবেশের অনুমতি পায় মাত্র দুটি গাড়ি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর লক্ষাধিক অনুসারী। গতকাল মধ্যরাতে এই ‘ধর্মগুরু’ এক ভিডিও বার্তায় তাঁর অনুসারীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি অনুসারীদের প্রতি শান্ত থাকারও আহ্বান জানান।

বর্তমানে পঞ্চকূলা শহরে সান্ধ্য আইন জারি আছে। আজ শুক্রবারের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ, সংশ্লিষ্ট এলাকা ও পুরো পঞ্চকূলা শহরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

রায় ঘোষণার পরপরই রাম রহিমের হাজার হাজার অনুসারী বিক্ষোভ করতে গিয়ে সহিংস হয়ে ওঠেন। তাঁরা বিভিন্ন যানবাহন ও সরকারি অফিসে ভাঙচুর চালান। এ ছাড়া পঞ্চকূলা শহরের কিছু আবাসিক কলোনিতেও ভাঙচুর চালানো হয়। শহরের একটি পেট্রলপাম্প ও পাঁচতারকা হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

শহরটির তিন নম্বর সেক্টর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ওই এলাকাতেই সিবিআইয়ের আদালতটি অবস্থিত। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরু কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। ভারতের বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাম রহিমের শতাধিক অনুসারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। সংঘর্ষে কমপক্ষে একজন সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শুধু পঞ্চকূলা নয়, পাঞ্জাবেও ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। ওই রাজ্যের মালৌত শহরে একটি রেলস্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই রাজ্যের মানসা শহরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং দুটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দামি কাপড় ও গয়না পরার কারণে রাম রহিম ‘গুরু অব ব্লিং’ নামেও পরিচিত। দুটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। এগুলো হলো ‘মেসেঞ্জার অব গড (এমএসজি)’ ও এর সিক্যুয়েল ‘এমএসজি২’।

ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে দোষী ‘ধর্মগুরুদের’ তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন এই রাম রহিম সিং। আসারাম নামের আরেক ধর্মগুরু ও তাঁর ছেলে বর্তমানে ধর্ষণের অভিযোগে কারাগারে আছেন।

x

Check Also

চীন ভারত সীমান্তে আবার সংঘর্ষ

এমএনএ আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  সীমান্ত নিয়ে বিরোধের জেরে চীন এবং ভারতীয় সেনাদের মধ্যে আবারো সহিংসতার ...