Don't Miss
Home / জাতীয় / রাজধানী / শোকের ব্যানারে সুখের ছবি!

শোকের ব্যানারে সুখের ছবি!

এমএনএ রিপোর্ট : আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর সর্বত্রই নেতা-কর্মীদের নামে বেনামে ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে গেছে। কিন্তু শোকাহত এ দিনটিতে শোকের ব্যানার-ফেস্টুন জুড়ে রয়েছে নেতাকর্মীদের হাসোজ্জ্বল ছবি। এমন প্রচারণায় শোক নিয়ে জন সাধারণের মনে প্রশ্নের উদ্রেক সৃষ্টি করেছে।

ফার্মগেট এলাকায় আনন্দ সিনেমা হলের দেয়ালে একটি বিশাল ব্যানার লাগানো হয়েছে। ব্যানারটি মোটামুটি সবার চোখে পড়ে। ব্যানারে লেখা হয়েছে, ‘রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী আমরা গভীরভাবে শোকাহত, তার মাগফেরাত কামনা করছি…’। ছবির একপাশে বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজলুল হক মনির ছবি, অন্যপাশে শেখ হাসিনার ছবি। আর যারা শোকাহত হয়েছেন, তাদের ছবিও রয়েছে। এদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ দায়িত্বশীল পাঁচ নেতার ছবি রয়েছে। সৌজন্যে লেখা রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির আলম লিটুর নাম।

ফার্মগেটে এরকম আরও অর্ধশতাধিক ব্যানার-ফেস্টুন রয়েছে। শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানী পুরোটাই ছেয়ে গেছে নেতাদের ছবি সংবলিত এরকম ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে। শোক দিবসে উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর এসব পোস্টারে কোনো শোকের চিহ্ন নেই, বরং রয়েছে নেতাকর্মীদের হাসিমাখা মুখ! তাদের সুখের ছবি! আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগ, ছাত্র লীগ, হকার্স লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছবি।

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, কোনো ব্যানার, পোস্টার বা ফেস্টুনের মাধ্যমে ছবি ব্যবহার করে নিজেদের আত্মপ্রচার করা যাবে না বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কেবল দল বা সংগঠনের নাম ব্যবহার করতে হবে। তারপরেও অনেক উঠতি নেতাকর্মী না বুঝে এসব করছে, যা এক ধরনের ব্যাধি ও এরা অসুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন বলেও মনে করছেন তারা।

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো ব্যানার বা ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিই খুঁজে পাওয়া দায়। একটি ফেস্টুনে একাধিক নেতাকর্মীর ছবি স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ছবি এক কোনায় ছোট করে দেওয়া হয়েছে। কোনোটায় আবার নেতাকর্মীদের ছবিই বড়। বঙ্গবন্ধু নয়, ফোকাস করা হয়েছে নেতার ছবিকে। কোনো কোনোটায় নেতাদের ছবি না থাকলেও তার নাম রয়েছে, যেটি আবার ১৫ আগস্ট লেখার চেয়েও বড়। রঙের পার্থক্যের কারণে ওই ব্যানার বা ফেস্টুনে ১৫ আগস্ট বা বঙ্গবন্ধুর ছবির চেয়ে সংশ্লিষ্ট নেতার নামটাই আগে চোখে পড়ে।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এলাকায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে নানান আয়োজন রয়েছে। ওই এলাকায় রয়েছে কমপক্ষে দুই শতাধিক ব্যানার-ফেস্টুন। আশপাশের দেয়ালজুড়ে রয়েছে হাজারও পোস্টার। ‘শোকাহত’ নেতাদের শ্রদ্ধা জানানো এসব ব্যানার ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি একপাশে দেওয়া হয়েছে ও নেতাকর্মীদের ছবি বড় করে দেওয়া হয়েছে, এমন অসংখ্য ফেস্টুন ও ব্যানার শোভা পাচ্ছে। অথচ চাইলেই এসব সরানো বা নামিয়ে ফেলা যেত।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোনো ধরনের পোস্টার-ব্যানারে ব্যক্তির ছবি লাগানো নিষেধ রয়েছে। আমার এলাকায় যা ছিল, সব সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজকেও অনেকগুলো নামানো হয়েছে। এগুলো না বুঝে অনেকেই করছে।’

আওয়ামী লীগের শেষ কাউন্সিলে বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাউন্সিল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, কোনো ধরনের ব্যানার-পোস্টার বা ফেস্টুনে নিজের ছবি ব্যবহার করে আত্মপ্রচার করা যাবে না। এক্ষেত্রে দল বা সংগঠনের নাম ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু অনেকেই এই নির্দেশনা মানছে না।’

ব্যানার ফেস্টুনে ব্যক্তির ছবির ব্যবহার এক ধরনের ব্যাধি এমন মন্তব্য করে সোহাগ বলেন, ‘আগে এই ব্যাধি আরও মারাত্মক ছিল। এখন কিছুটা কমে এসেছে। এদের মানসিকতাও অসুস্থ। এসব অসুস্থ রাজনৈতিক চর্চা। এসব বর্জন করতে হবে।’

‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বা ১৫ আগস্টকে ঘিরে এই ব্যানার-ফেস্টুনে ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার কেবল তাদের কাটতি বাড়ানোর জন্য। সিনিয়রদের চোখে পড়ার জন্য। কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে, এর মাধ্যমে তারা আরও দলেও ক্ষতি করছে। শুধু নেতাকর্মীরাই নন, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এই কাজ করছেন, যা অন্যায়’, যোগ করেন তিনি।

তবে ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।

যুবলীগের প্রচুর ব্যানার ফেস্টুন দেখা গেছে। যেগুলোয় আবার কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের ছবিও রয়েছে। এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শোক দিবসের কোনো ব্যানার পোস্টারে কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন, কেবল তাদের ছবি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া কিছু নয়, এ নিয়ে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে।’

আপনার ছবিও রয়েছে শত শত ব্যানারে? এমন কথার জবাবে যুবলীগের সম্পাদক বলেন, ‘এটা আমার জানা নেই। অনেকেই না বুঝে এসব করে থাকে। খোঁজ নিচ্ছি, এসব পোস্টার নামানো হবে।’

রাজশাহীতেও এমন পরিস্থিতি কী না, জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজশাহীতে এমন ব্যানার ফেস্টুন নেই। শোক দিবসের ব্যানারে নেতাকর্মীদের ছবি থাকা খুবই খারাপ। এসব করা উচিত নয়। আমরা এলার্ট রয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। রাজধানীতে এসব বন্ধ করা উচিত।’

x

Check Also

এবার ঢাকা ছাড়লেন ১০৯ জন জাপানি নাগরিক

এমএনএ রিপোর্ট : করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ও জাপানে আটকে পড়াদের জন্য বিশেষ দুটি ফ্লাইট ...