Don't Miss
Home / জাতীয় / বিবিধ / সরানো হলো সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্যটি

সরানো হলো সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্যটি

এমএনএ রিপোর্ট : সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত সেই আলোচিত ভাস্কর্যটি গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার সময় ঘটনাস্থলে সুপ্রিম কোর্টে কর্তৃপক্ষের কারও দেখা মেলেনি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নাকি অন্য কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে-এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার বা অন্য কোন কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে বহুবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদ জানান এবং সড়ক অবরোধ করেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে ভাস্কর্যটি সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি রাতে গণসাধ্যমকে জানান, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের জাদুঘরে রাখা হবে। ভাস্কর্য অপসারণের সময় উপস্থিত ছিলেন এর স্থপতি মৃণাল হক। গত বছরের ডিসেম্বরে তার তত্ত্বাবধানেই এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল।

গতকাল রাতে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২২ থেকে ২৫ জন শ্রমিক ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ করছেন। পাশে রাখা ছিল ছোট ট্রাক। কয়েকজন শ্রমিক হাতুড়ি, শাবল ও হ্যামার দিয়ে ভাস্কর্যের উপরের অংশ অক্ষত রেখে নিচের পিলার ভাঙছেন।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের বাইরে অপেক্ষমাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের বাগানপরিচর্যাকারী আবুল কাশেম গণসাধ্যমকে বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ দেখতে পান ট্রাকে করে শ্রমিকরা সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করছেন। এর কিছুক্ষণ পরই শ্রমিকরা ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ শুরু করেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির উপস্থিতিতে ‘ফুলকোর্ট’ সভা হয়। সেখানে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন বিষয়ক একটি বিধি অনুমোদনের পাশাপাশি ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা খাস কামরায় আমাকে ডেকেছিলেন। এসময় ড. কামাল হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সুপ্রিম কোর্টের বারের বর্তমান ও সাবেক দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা সবাই ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার পক্ষে মত দিই। প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে আমি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না।

শ্রমিকরা যখন ভাস্কর্যটি ভাঙার কাজ করছিল তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভাস্কর মৃণাল হক। একপর্যায়ে তিনি রাস্তার দিকে এলে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়ার জন্য ঘিরে ধরেন। কথা বলতে গিয়ে তিনি কিছুক্ষণ দুই হাত দিয়ে চোখ মোছেন। একপর্যায়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘এখানে কিছু বলার নাই। অনেকের অনেক ক্ষমতা আছে। এটি আমি বানিয়েছি। আমাকে চাপ দেয়া হয়েছে, তাই সরাতে বাধ্য হচ্ছি।’

ভাস্কর্যটির কি হবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুনেছি অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সামনে সরানো হতে পারে। তিনি বলেন, এরপর হয়তো সারাদেশের ভাস্কর্য সরানোর দাবি উঠবে।

ভাস্কর্য অপসারণের সময় মৃণাল হক সাংবাদিকদের আরও বলেন, আমি সবই জানি- কেন এই ভাস্কর্যটি সরানো হচ্ছে। কার নির্দেশে তা হচ্ছে। তবে কিছুই বলবো না।’

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতের এই দাবির নিন্দা জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী এক বিবৃতিতে বলেন, সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বাংলাদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আদর্শিক চেতনার একেবারেই বিপরীত। অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।

উল্লেখ্য, রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’-এর আদলে এই ভাস্কর্যটি ৬ মাস আগে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপন করা হয়েছিল।

x

Check Also

ডিজি

স্বাস্থ্যে অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক হলেন ডা. খুরশীদ আলম

এমএনএ বিশেষ রিপোর্টঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি ...