Don't Miss
Home / জাতীয় / বিবিধ / পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি

এমএনএ রিপোর্ট : পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাননি কানাডার টরোন্টোর এক আদালত। তাই কানাডার মন্ট্রিলভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

কানাডার টরন্টো স্টার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে গতকাল শুক্রবার বলা হয়েছে, এই রায়ের ফলে এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়া মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন।

কেভিন এসএনসি-লাভালিনের জ্বালানি ও অবকাঠামো বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ছিলেন। তাঁরা তিনজনই বাংলাদেশে কাজ পেতে এ দেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গতকাল আদেশ দেওয়ার সময় টেলিফোনে আড়ি পেতে পাওয়া যেসব প্রমাণ দাখিল করা হয়েছিল, সেগুলো নাকচ করে দেন আদালত। সেই সঙ্গে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) তদন্ত কার্যক্রমের সমালোচনা করা হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ যোগাড়ে ফোনে আড়ি পাতা তথ্য (ওয়্যার ট্যাপস) ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ২০১১ সালে তিনটি আবেদন করে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)।

অন্টারিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ইয়ান নরডেইমার আদেশে বলেন, ওই তিন আবেদনের বিষয়ে তার ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে।

বিচারক নরডেইমার গত জানুয়ারিতে এই সিদ্ধান্ত দিলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তা প্রকাশে বাধা ছিল বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

“ওই গুজব বা অনুমানকে সমর্থন করে এমন ঘটনা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি বা তার তদন্ত হয়নি। যে তথ্য‌ সরাবরাহ করা হয়েছে তা শোনা কথা, যা আরও শোনা কথা হাজির করেছে, ” বলেন বিচারক।

দুর্নীতির এই অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যায়। পরে নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেয় বাংলাদেশ সরকার।

দুর্নীতির ওই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন সেই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। অভিযোগ ছিল সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দুদকের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়।

বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি) অনুরোধ জানায়।

ওই অনুরোধে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডায় এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২০১২ সালে টরোন্টোর আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে এসএনসি-লাভালিনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস ও ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূইয়াকেও এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।

সে সময় রমেশ শাহের কাছ থেকে কানাডীয় পুলিশের জব্দ করা একটি ডায়েরি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়, যাতে ‘বাংলাদেশের কাকে কতো শতাংশ ঘুষ দেয়া হবে’ তার সাংকেতিক বিবরণ ছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

এদিকে বিশ্ব ব্যাংকের চাপে ‘ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগে দুদক ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করলেও ২২ মাস পর তদন্তকারীরা বলেন, অভিযোগের কোনো প্রমাণ তারা তদন্তে পাননি।

দুদক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে পদ্মা দুর্নীতি মামলার অবসান ঘটে, তখনকার সেতু সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

গতকালের আদেশে বিচারক লেখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, ‘তা জল্পনা, গুজব আর জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই না’।

আদালতের আদেশের পর কেভিন ওয়ালেসের আইনজীবী স্কট ফেনটন বলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁর মক্কেল নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি খুশি। রমেশ ও জুলফিকারের আইনজীবীরাও এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

এসএনসি-লাভালিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। আর আরসিএমপিও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল।

x

Check Also

অন্তর্বর্তী সরকার

একের পর এক বিক্ষোভে অন্তর্বর্তী সরকারের চাপ বাড়ছে: রয়টার্স

এমএনএ ফিচার ডেস্কঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজপথে ...