এমএনএ ফিচার ডেস্ক : আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরের আলো ফোটার আগেই বাঙালি জাতিকে মুক্তির আলো দেখানো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল চক্রান্তকারী কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য। ঘাতকেরা ওই দিন নারী ও শিশুদেরও রেহাই দেয়নি, যা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ১ আগস্ট থেকেই শ্রদ্ধা, আলোচনা, মিলাদ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, ছবি প্রদর্শনীসহ শোকের মাসের কর্মসূচি পালন করছে। আজ ও কাল মঙ্গলবার থাকছে বিস্তারিত কর্মসূচি।
আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। তাঁরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আত্মনিয়োগে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সেই রাতে যাঁদের হত্যা করা হয়েছিল: বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ১৫ আগস্ট রাতে তাঁর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককে হত্যা করা হয়।
প্রায় একই সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে তাঁকে ও তাঁর কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় রেন্টু খানকে হত্যা করা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুর সমাধি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের কবর দেওয়া হয়েছে বনানী কবরস্থানে।
রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি: আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী গার্ড অব অনার দেবে। এরপর বিশেষ মোনাজাত ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হবে সেখানে। প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও নিহত অন্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং সেখানে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন। সকাল নয়টায় প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এ সময় ফাতেহা পাঠ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল হবে। সারা দেশে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, কবিতাপাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
আ. লীগের কর্মসূচি: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি নিয়েছে। আজ সূর্যোদয়ের সময় বঙ্গবন্ধু ভবন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা এবং কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ছয়টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে এবং সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল, ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত এবং বেলা ১১টায় মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল, দুপুরে অসচ্ছল, দুস্থ মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ, বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
কাল মঙ্গলবার বেলা চারটায় ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।