এমএনএ সংবাদ ডেস্ক : আগামীকাল বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকায় ‘সাকরাইন উৎসব’। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে এই উৎসব হয়ে আসছে প্রায় চারশত বছর ধরে। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে ঘুড়ি ওয়ালাদের দখলে থাকবে পুরান ঢাকার আকাশ। একে ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তিও বলা হয়। আগে এ উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে পুরান ঢাকায় সাড়ম্বরে পালিত হয় এ দিনটি। উৎসবে অংশ নেন সব ধর্মের সব বয়সী মানুষ। ঢাকার অন্যান্য এলাকার তরুণ-তরুণীরাও উৎসবে যোগ দিতে ছুটে যান পুরান ঢাকায়।
এছাড়া এবারের আয়োজনটি আরও বেগবান হবে সেখানে। কারণ প্রথমবারের মতো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাজধানীর আকাশে পুরান ঢাকার ৭৫টি ওয়ার্ড একযোগে এই উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। জানানো হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটির আকাশ রাঙাতে করপোরেশনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।
সাকরাইন উৎসব-১৪২৭ আয়োজন প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘ঐতিহ্যের সুন্দর, সচল, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার যে রূপরেখা মেয়র ঘোষণা করেছেন, তারই আলোকে এবার পৌষ সংক্রান্তিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে সমন্বিতভাবে পৌষ সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ কার্যক্রমে আমাদের কাউন্সিলরবৃন্দ ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থেকে একটি সফল আয়োজনের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই আয়োজন পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ফিরিয়ে আনতে একটি মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরো বলেন, ‘যদিওবা উৎসবে আমরা কাউন্সিলরদের কাছে ১০০টি করে মোট ১০ হাজার ঘুড়ি সরবরাহ করব এবং সেসব ঘুড়ি আগ্রহী লোকজনের মাঝে বিতরণ করা হবে, তারপরও কেউ বাদ পড়লে সংশ্লিষ্ট আগ্রহী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নিজ বাড়ির ছাদ থেকে নিজের ঘুড়ি নিয়ে এই উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। এই উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত, সার্বজনীন। শীঘ্রই একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের বরাতে উৎসবের খুঁটিনাটি জনগণকে অবহিত করা হবে।’
মূলত; পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, মুরগীটোলা, ধূপখোলা, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, নারিন্দা, সূত্রাপুর, কাগজিটোলা, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতী বাজার এবং লালবাগ এলাকার মানুষ এ উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়ান। আয়োজন করেন নানা খাবারের। এছাড়া সন্ধ্যায় আতশবাজী ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অঙ্গ।
সাকরাইনের দিনে সকাল থেকেই ছাদে ছাদে শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত থাকে প্রতিটি ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুস। আর আকাশে বাড়বে ঘুড়ির সংখ্যা। সকালের তুলনায় বিকালে এ উন্মাদনা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদের উপর চলবে গানবাজনা আর খাওয়া-দাওয়া। সে সঙ্গে আনন্দের উত্তাপকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা।
এছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হবে মুড়ির মোয়া, বাকরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম। বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজী ও ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজির খেলা।
সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেওয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।
এ উৎসবকে মাথায় রেখে গত এক সপ্তাহ পুরান ঢাকার বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্ন গলির অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে হয়েছে সুতা মাঞ্জা দেওয়ার ধুম।