Don't Miss
Home / দিবস / আজকের দিবস / বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস আজ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস আজ

এমএনএ ফিচার ডেস্ক :  আজ বাইশে শ্রাবণ। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ভাষার শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৫তম প্রয়াণ দিবস। কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল জন্মগ্রহণ করেন। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ ঠাকুরবাড়ির শ্যামল প্রাঙ্গণে বর্ষণসিক্ত পরিবেশে তিনি পরলোকগমন করেন।

বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, দার্শনিক, সঙ্গীত Rabidranathরচয়িতা, সুরস্রষ্টা, গায়ক, অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবী এবং শিক্ষাবিদ। বহুগুনে গুনান্বিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আখ্যায়িত করা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি হিসেবে। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোনো দিক নেই যা নিয়ে তিনি লেখালেখি করেননি।

বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আর মা সারদা দেবীর ১৪ সন্তানের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ১৩তম। জন্মের সময় তার ডাক নাম রাখা হয় রবি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রবির প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘অমৃত বাজার’ পত্রিকায়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৮৭৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ছোটগল্প ও নাটক লিখেন। তাকে বাংলা ভাষায় ছোটগল্প রচনাধারার প্রবক্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাহিত্য হচ্ছে তার কবিতা ও গান। তার গান আজও বাঙালিদের নিত্যদিনের জীবনচর্চায় মিশে আছে গভীরভাবে। একই সঙ্গে উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমনকাহিনী এবং নাটক রচনায়ও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- বনফুল, সোনার তরী, মানসী, চিত্রা, কল্পনা, ক্ষণিকা, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতালি, গীতিমালা, সেজুতি, বলাকা, পূরবী, পুনশ্চ, জন্মদিনে, শেষ লেখা প্রভৃতি। নাটকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিরকুমার সভা, তাসের দেশ, রক্তকরবী, চোখের বালি, শেষের কবিতা। কবির ‘জন গণ মন’ গানটি ভারতের এবং ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা রবীন্দ্রনাথের জীবনকে মহিমান্বিত করেছে।

রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের আবেদন বিশ্বজনীন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পযর্ন্ত রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

Rabindranathরবীন্দ্রনাথের হাতেই বাঙালির ভাষা ও সাহিত্য, শিল্পকলা ও শিল্প চেতনা নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে। বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি বিশ্বকবি, কবিগুরু ও গুরুদেব নামে পরিচিত।

ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও তার লেখা। বলা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও তার লেখা।

সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার মনে হয়েছিল, প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘বিশ্বভারতী।’

রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্য সাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন সেই পরমার্থের সাথে তিনি আজও অমর। মৃত্যুর প্রায় আট দশক পরেও তিনি বাঙালির জীবনে প্রবাদের মত আছেন। মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের স্বাক্ষর বয়ে চলেছেন যেন আজও।

বাংলাভাষা এবং বাঙালী জাতিসত্তার সঙ্গে যে ব্যক্তিটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, তিনি হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যার ছোঁয়ায় বাঙালী সংস্কৃতির আধুনিক রূপায়ণ ঘটেছে। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কবিদের মধ্যে তিনি একজন। তাঁর সব্যসাচী হাতের স্পর্শে প্রাণ পেয়েছে বাংলা ছোট গল্পের সীমাবদ্ধ অধ্যায়। উপন্যাস, কবিতা ও নাটকে এসেছে বৈচিত্র্য আর সঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তো এখনও তাঁকে বলা হয় অতুলনীয় স্রষ্টা। এছাড়া তিনি ছিলেন একাধারে সমাজ ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদ এবং ভাষাবিজ্ঞানী। তবে তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি কবি। শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় সামান তালে বিচরণ করা লেখকের সংখ্যা এখন পর্যন্ত কম, যে কারণে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই উচ্চারিত হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। যিনি বাংলা শিল্প সংস্কৃতিকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।

আজ ২২ শ্রাবণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণদিবস, বাঙালী জাতির জন্য একটি স্মরণীয় দিন। যে দিনটি কখনই ভোলার নয়। নানা ধরনের আয়োজনে পালন করা হয় বিশ্বকবির মৃত্যুবার্ষিকি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও এর ব্যক্তিক্রম হবে না। তবে প্রতিবছরই একটু একটু করে বৃদ্ধি পায় আয়োজনের পরিধি। বাঙালীর প্রাণের মানুষের এই জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন পালনে থাকে না কোন কার্পণ্য। রীতিমতো উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয়ে থাকে তাঁর । এসব পালনে থাকে না জাতি-ধর্ম ভেদাভেদ। শুধুুমাত্র তার অতুলীয় সৃষ্টিকে উপজীব্য করে সবাই মিলিত হয় প্রাণের মেলায়। একেকজন একেক আঙ্গিকে পালন করে থাকে দিবসটিকে।

Rabindranath-Tagore--রবীন্দ্র কাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে। জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বার বার। মৃত্যু বন্দনা করেছেন তিনি এভাবে-‘মরণ রে, /তুঁহু মম শ্যাম-সমান। /মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট!/ রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, /তাপ বিমোচন করুণ কোর তব /মৃত্যু-অমৃত করে দান। /তুঁহু মম শ্যাম সমান।’

রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিজীবনে মৃত্যুকে বড় গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে স্ত্রী বিয়োগের মধ্যদিয়ে। কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণী দেবীকে ‘ভাই ছুটি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন। কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন তাঁর বয়স তখন মাত্র ঊনত্রিশ।

কিশোর বয়সে বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীর অকালমৃত্যু ও আরও পরে স্ত্রীর মৃত্যু। একমাত্র রথীন্দ্র ছাড়া তিন কন্যা ও এক পুত্রের অকাল মৃত্যু হয়। পুত্র-কন্যাদের অকাল মৃত্যুর নিদারুণ যন্ত্রণা তাকে সহ্য করতে হয়েছে। একে একে প্রিয়জনদের মৃত্যুর নীরব সাক্ষী ও মৃত্যুশোক রবীন্দ্রনাথের এক অনন্য অভিজ্ঞতা লাভে সহায়ক হয়েছিল। কবি জীবনস্মৃতিতে ‘মৃত্যুশোক’ পর্যায়ে অকপটে লেখেন, ‘জগৎকে সম্পূর্ণ করিয়া এবং সুন্দর করিয়া দেখিবার জন্য যে দূরত্ব প্রয়োজন, মৃত্যু দূরত্ব ঘটাইয়া দিয়াছিল। আমি নির্লিপ্ত হইয়া দাঁড়াইয়া মরণের বৃহৎ পটভূমিকার উপর সংসারের ছবিটি দেখিলাম এবং জানিলাম, তাহা বডডো মনোহর।’

মৃত্যুকালীন সময় পূর্বে অর্থাৎ অসুস্থ অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের বেশকিছু কবিতা ছিল মৃত্যু চেতনাকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে ‘মরণের মুখে রেখে দূরে যাও দূরে যাও চলে, মরণ বলে, আমি তোমায় জীবনতরী বাই, আবার যদি ইচ্ছা করে আবার আসি ফিরে, পেয়েছি ছুটি বিদায় দেহো ভাই সবারে আমি প্রণাম করে যাই, আবার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর’ উল্লেখযোগ্য ।

জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর সাধের শান্তি নিকেতনে। সেদিন তাঁর কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়েই ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’।

Rabindranath-Tagoreশান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ্য তিনি গ্রহণ করেন তাঁর উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল কার’।

রবীন্দ্র জীবনী থেকে জানা গেছে, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকোতে রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন রানী চন্দ লিখে নিতেন। কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক দিন আগে চৌদ্দই শ্রাবণ। রানী চন্দ সে দিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর বর্ণনা পাওয়া গেছে এভাবে-আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি।’ পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পুড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র কষ্ট লাঘব হল না। আগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ে। ৬ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে মন্ত্র জপ করা হচ্ছে ব্রাহ্ম মন্ত্র ‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতম….’ ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়…..’।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মৃত্যু পথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃত আলোকের নতুন দেশে

বাংলা সাহিত্যকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অসামান্য। তাই তো তিনি আজও বেঁচে আছেন আমাদের হৃদয়ে, থাকবেন সবসময়।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠকুরের ৭৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী আজ বিকেল ৪টায় একাডেমীর শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ‘যুদ্ধ এবং বিশ্ব শান্তি’ প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক ড. বেগম আখতার জামান।

বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে। এছাড়াও বিশ্ব কবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন আজ শনিবার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

Save

Save

x

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

জামায়াত-শিবিরের জঙ্গিরা থাবা বসিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এমএনএ রাজনীতি ডেস্কঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক তাণ্ডবকে জঙ্গিবাদী কাজ উল্লেখ করে আওয়ামী ...