আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা
Posted by: News Desk
June 30, 2019
এমএনএ অর্থনীতি রিপোর্ট : আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বর্তমানের চেয়ে গড়ে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। ১ জুলাই থেকে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য ৯৭৫ এবং এক চুলার জন্য ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ রবিবার বিকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করে। এরপর মার্চ মাসে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম অনুযায়ীই আজ রবিবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিল কমিশন।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। বাসাবাড়িতে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা করার আবেদন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, সিএনজি, সার, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প-বাণিজ্যসহ সব খাতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে গত মার্চে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। বিইআরসি আইন অনুসারে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনকে সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। জুনে সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
আইনে আরও উল্লেখ রয়েছে, কমিশন যদি মনে করে কোম্পানির কাছ থেকে আরও তথ্য নিতে হবে তাহলে সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। তাই জুনে সময়সীমা ফুরালেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত জুলাই মাসে নেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে গত বছরের জুনেও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। কিন্তু সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় তখন দাম বাড়ানোয় সরকারের সাড়া মেলেনি। তাই গত ১৬ অক্টোবর সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশ করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি।
জ্বালানি বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অনেক বেশি। আর দেশে গ্যাসের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। এ হিসাবে চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করতে হলে সরকারকে আরও অনেক বেশি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কাজেই গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে কোনো বিকল্প নেই।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, এতদিন আমদানি কম হওয়ায় সরকারের ওপর লোকসানের চাপ বেশি হয়নি। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এলএনজি আমদানিতে সম্পূরণ শুল্ক, কাস্টমস ডিউটি ও অগ্রিম বাণিজ্য ভ্যাট প্রত্যাহার করায় গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত ছিল। আমদানি ১০০০ এমএসিএফডি ছাড়ালে দাম বাড়ানোর তোড়জোড় আরও আগে থেকেই শুরু হতো।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের পর আগস্টে বাংলাদেশ এলএনজি যুগে প্রবেশ করে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে ওই টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সর্বোচ্চ ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার টার্গেট ছিল সরকারের। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় সরকার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য বলেন, তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে জুলাইয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। কমিশনের ওই সদস্য জানান, শুনানিতে পাওয়া মতামত যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে।
দাম বাড়ানোর বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, গ্যাস খাতে লোকসান কমাতে হলে প্রথমে চুরি ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি সাগর ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে। দেশীয় গ্যাস পেলে কম টাকায় সরবরাহ করা যাবে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস-সংকট দূর করা যাবে না।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা থাকলেও মার্চে দাম কার্যকর হয়। আর জুলাই মাসের দাম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়।
দাম ঘোষণা গ্যাসের আবারও বাড়ানোর 2019-06-30