Don't Miss
Home / ইসলাম ও জীবন / ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ / রোজা / তারাবিহ নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম

তারাবিহ নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম

এমএনএ নিউজ ডেস্ক : মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহাঅনুগ্রহের মাস রমজান। এ মাসের মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো কিয়ামুর রমজান তথা তারাবিহ নামাজ। রমজান মাসে বিভিন্ন মসজিদে মহল্লায় তারাবিহ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

একটা বিষয় পরিলক্ষিত হয় যে মসজিদে তারাবিহ নামাজ তাড়াতাড়ি আদায় করা হয়, সে মসজিদ মসজিদ খুঁজে বের করে। দূর হলেও সে মসজিদে গিয়ে তারাবিহ নামাজ আদায় করে।

অথচ তারাবিহ নামাজ ধীর স্থিরভাবে আদায় করাই হলো সঠিক নিয়ম। প্রতিযোগিতা করে তারাবিহ নামাজ আদায় করা সুন্নাতের পরিপন্থী।

তাই আসুন, তাড়াহুড়ো বা দ্রুত নয়; বরং ধীরস্থিরভাবেই তারাবিহ নামাজ আদায় করি।

তারাবিহ

তারাবিহ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’। প্রতি চার রাকাআত নামাজ শেষ করে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা যায় তাই একে তারাবিহ বলা হয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তারাবিহ নামাজ ছিল অনেক দীর্ঘ। এমনকি কিয়াম, রুকু, সিজদা সবাই ছিল খুব লম্বা ও ধীরস্থির। হাদিসে এসেছে-

হজরত সাঈর ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইমাম সাহেব তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহতে শত শত আয়াত পড়তেন। ফলে সুদীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে আমরা লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। (মুয়াত্তা মুহাম্মদ)

তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম

তারাবিহ নামাজ ২ রাকাআত করে প্রতি ৪ রাকাআত পর খানিক বিশ্রাম গ্রহণ করা। এ সময় দোয়া করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। পরবর্তী ৪ রাকাআত সুন্দরভাবে আদায়ের শক্তি গ্রহণ করা।

অনেকে প্রতি ৪ রাকাআত পর পর মুনাজাত দেয়। আবার অনেকে একেবারে নামাজ শেষ করে মুনাজাত দেয়। উভয়টিই করা যেতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই।

তারাবিহ নামাজে ইমাম হোক আর মুসল্লি হোক প্রতিযোগিতা করে তারাবিহ পড়ার প্রবনতা পরিহার করা উচিত। কারণ যত তাড়াতাড়িই নামাজ পড়ার চেষ্টাই করা হোক না কেন, তাতে সময়ের ব্যবধানে বেশি হেরফের হয় না।

সুতরাং সামান্য সময়ের জন্য তারাবিহ নামাজের সৌন্দর্য বিনষ্ট করতে তাড়াতাড়ি তারাবিহ পড়ার প্রবনতা থেকে বেরিয়ে এসে অধিক ছওয়াব অর্জনের প্রত্যাশায় ধীর ও স্থিরভাবে তারাবিহ পড়াই উত্তম।

তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া

রমজানের রোজা পালন উপলক্ষে শাবান মাসের শেষ দিন ইশার নামাজের পর ২ রাকাআত করে প্রতি ৪ রাকাআত পর পর মুসলিম বসে কিছুক্ষণ বিরতি নেয়। আর এ সময় একটি দোয়া পড়া হয়। ৪ রাকাআতের পর দোয়া, ইসতেগফার, তাসবিহ-তাহলিল পড়ার মাধ্যমে রাত জাগরণ করাই মুমিন বান্দার কাজ।

তারাবিহ নামাজের ৪ রাকআত পর পর বহুল প্রচলিত একটি দোয়া আছে। যা তুলে ধরা হলো-

উচ্চারণ: সুবহানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ই’যযাতি ওয়াল আ’জমাতি, ওয়াল হায়বাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

তারাবিহ নামাজের নিয়ত

তারাবিহ নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। দুই দুই রাকাআত করে তা পড়া যায়; আবার এক সঙ্গে ৪ রাকাআতও পড়া যায়। যেহেতু তারাবিহ নামাজ লম্বা ক্বেরাতে পড়া উত্তম। তাই দুই দুই রাকআত করে ধীর স্থিরভাবে পড়াই উত্তম।

তারাবিহ নামাজ আদায়ের সময় আরবি এবং বাংলায় নিয়ত করলেও হবে। আরবি নিয়ত-

উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা, (ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমাম) মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে বন্ধনীর অংশটুকুসহ পড়তে হবে)

বাংলায় নিয়ত

তারাবির নামাজের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ (এ ইমামের সঙ্গে) কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ তাআলার জন্য আদায় করার নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।

তারাবিহ নামাজ দুই দুই রাকাআত করে আদায় করে প্রত্যেক ৪ রাকাআত পর পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তাসবিহ-তাহলিল, ইসতেগফার অথবা উল্লেখিত দোয়া পড়া। রাত জেগে আল্লাহ নৈকট্য অর্জনে রোনাজারি ও কান্নাকাটি করা।

তারাবিহ নামাজের মোনাজাত

তারাবিহ নামাজ আদায় করা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবিহ আদায়ের ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। ফিকহি পরিভাষায় তারাবিহ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। রমজান মাসে ইশার নামাজ আদায়ের পর এ নামাজ আদায় করা হয়। তারাবিহ নামাজ চার চার রাকাআতে আদায় করে অনেকেই দোয়া পড়ার পর মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে থাকে। আবার অনেকে সম্পূর্ণ নামাজ শেষ করে মোনাজাত করে থাকে। যে কোনো দোয়া দিয়েই মোনাজাত করা যায়। তারাবিহ নামাজের বহুল প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে। যা তুলে ধরা হলো-

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউ’জুবিকা মিনান নারি , ইয়া খালিক্বাল জান্নাতা ওয়ান নারি, বিরাহমাতিকা ইয়া আযিযু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারিমু, ইয়া সাত্তারূ, ইয়া রাহিমু, ইয়া ঝাব্বারূ, ইয়া খালিক্বু, ইয়া বাররূ; আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান নারি; ইয়া মুঝিরূ, ইয়া মুঝিরূ, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খতম তারাবিহ হোক আর সুরা তারাবিহ হোক; সব তারাবিহ নামাজ ধীরস্থিরভাবে পড়ার তাওফিক দান করুন। তারাবিহর ফজিলত লাভে নিয়মিত রাত জাগরণ করে তারাবিহ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

x

Check Also

২৬ মার্চ

আজ ২৬ মার্চ – মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

এমএনএ ফিচার ডেস্কঃ আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির ইতিহাসে গৌরবময় একদিন। ...