এমএনএ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্কঃ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বা এআই নিয়ে নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এআই আইন নিয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী। এ বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই যেভাবে পৃথিবী বদলে দিচ্ছে, সেটার ব্যাপারে একটা আইন যে রকম সারা পৃথিবীতে চিন্তা করা হচ্ছে বাংলাদেশেও চিন্তা করা উচিত। সেই চিন্তা করার জন্যই আজ প্রাথমিকভাবে বসেছিলাম। আজ আইনের একটা আউটলাইন করলাম। এ বিষয়টা এত ব্যাপক একদিনের আলোচনায় শেষ হবে না।
তিনি বলেন, আমরা যদি বলি আমাদের জ্ঞান যথেষ্ট হয়ে গেছে এ ব্যাপারে, আইন করার জন্য অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানেরও প্রয়োজন। এই আইনের খসড়ার জন্য আমরা আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি খসড়া তৈরি করবো। সেই খসড়ায় কী কী থাকবে, সেটা নিয়ে আজ আউটলাইনটা আলাপ করেছি। সেই আউটলাইন অনুযায়ী কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, এই আইনের মধ্যে যে জিনিসগুলো থাকা উচিত, মনুষ্যত্বের দিক থেকে যে বিষয়গুলো রক্ষা করা উচিত- সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেছি। সেই আলোচনা শুরু হলো এবং আলোচনা চলবে।
আউটলাইনে কী কী থাকছে- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে সেটা বলতে চাই না। কারণ এটাও পরিবর্তনশীল। বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করার জন্য এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য, অন্য জায়গায় কী আইন হচ্ছে সেটা একটু পরীক্ষার জন্য এই সময়টুকু নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি এ সময়ের মধ্যে আমরা এ আইনটা তৈরি করতে পারবো।
এই আইনের ফলে কী হবে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, এটি আমাদের কাছেও জিজ্ঞাস্য। এর কারণ হচ্ছে আমরা কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করবো। এই জিনিসটুকু আমি বলতে পারি- মানুষের অধিকার সংরক্ষণের জন্য, সর্বক্ষেত্রে সেটা সংরক্ষণের জন্য, মানুষের সুবিধার জন্য এআই যাতে ব্যবহার করা যায় সেই চেষ্টাই করবো।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত আইনমন্ত্রী মহোদয় গ্রহণ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি আমাকে নির্দেশনা দেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমরা কী ভাবছি ও আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আমরা কতটা প্রস্তুত। উনার নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করি এবং যারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্ন্যান্স, স্মার্ট অর্থনীতি করতে হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাইপাস করে কিছু করতে পারবো না।
তিনি বলেন, এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ ও বড় একটা বিতর্ক হচ্ছে, আমরা কতটুকু উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবো কতটুকু অপপ্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করবো। এ বিষয় নিয়ে আজ আমরা আইনমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে এসেছিলাম। মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়ও বললেন একটা আউটলাইন আমরা দাঁড় করিয়েছি।
আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিবর্তনটা কত দ্রুত হচ্ছে, এর ব্যবহারটা কতটুকু আমরা আমাদের অর্থনীতির সমৃদ্ধি আনার জন্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য করতে পারি। বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য এটার কী কী ব্যবহার হতে পারে যেটা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে, উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দেবে, বলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।
জুনাইদ আহমেদ পলক আরও বলেন, একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যে ভয়ানক পরিণতি আশঙ্কা করা হচ্ছে যা বিভিন্ন গবেষক এবং উদ্ভাবক বলছেন, সেটাকে মাথায় রেখে আইনমন্ত্রী মহোদয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। একদিকে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা এবং এটার যে অপপ্রয়োগ সেটার প্রতিরোধ করা। আমাদের জনগণ, জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কোনো অপপ্রয়োগ যাতে না হয় সেটাকে মাথায় রেখেই আমরা আইনটা প্রণয়ন করবো। সেটার জন্য আমরা একটা সময় চেয়েছি। আইনমন্ত্রী আমাদের যথেষ্ট সময় দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন দেখেছি, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিকিউটিভ অর্ডার দেখেছি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ যেসব দেশ ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন পলিসি, গাইডলাইন, আইন করেছে সেগুলো স্টাডি করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের মেধাবী ছেলেমেয়ে যারা পড়াশোনা করেছে এবং জানে বোঝে তাদের মতামত নিয়ে এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আবার আসবো।