এমএনএ সংবাদ ডেস্ক : আজ (২৭ ডিসেম্বর) কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের জন্মদিন। এবার তিনি ৮৫-তে পা দিলেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতা করেছেন।
সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তাঁর নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা। তাঁর প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একশ’রও বেশী। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি।
রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক। তাঁর গল্পে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে কয়েকটি। রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি, এযাবৎ কাল পর্যন্ত চার খণ্ডে সংকলিত ছোটগল্প সংখ্যায় চারশোরও বেশি। ছোটদের জন্য লেখা গল্প-উপন্যাসও সংখ্যায় কম নয়।
রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের প্রধানতম লেখক। জরা তাঁকে জড় করতে পারেনি। ভ্রমণের ক্লেশ তাঁর কাছে প্রত্যক্ষাভিজ্ঞতার আনন্দ! কর্মজীবনে অনেক মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন। উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যাঁদের দ্বারা স্মৃতিমূলক রচনার মধ্য দিয়ে তাঁদের ব্যক্তিত্ব ও বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিতাকে পাঠকের কাছে হাজির করতে।
ছোটগল্প দিয়ে শুরু হলেও লেখকপরিচয়ে প্রথমত তিনি ঔপন্যাসিক। প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পান। ক্ষয়িষ্ণু তাঁতি সম্প্রদায়ের জীবনসংকট ও নাগরিক উঠতি মধ্যবিত্ত জীবনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার মধ্যে ব্যক্তিকে আবিস্কার করেছিলেন রাবেয়া খাতুন এই উপন্যাসে। রাবেয়া খাতুন ভ্রমণসাহিত্য রচনাকে গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসাবে বিবেচনা করেছেন বলে তাঁর ভ্রমণসাহিত্যের বইও অনেকগুলো। বেশ কিছু আত্মজৈবনিক স্মৃতিমূলক রচনা লিখেছেন। একাত্তরের নয় মাস (১৯৯০) বইয়ে লিখেছেন একাত্তরের শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা।
সাহিত্যর্চ্চার জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৯৩), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৩), নাসিরুদ্দিন স্বর্ণ পদক (১৯৯৫), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৬), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯) ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯)।
ছোট গল্পের জন্য পেয়েছেন নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮)। সায়েন্স ফিকশন ও কিশোর উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩)। ছোটগল্প ও উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে প্রেসিডেন্ট (১৯৬৬), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪), ধ্রুবতারা ও মধুমতি (২০১০)।
টিভি নাটকের জন্য পেয়েছেন টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭), বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টাস এসোসিয়েশন মিলেনিয়াম অ্যওয়ার্ড (২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টাস অ্যাওয়ার্ড (২০০০)সহ তিনি এ যাবত অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখির কাজে নিবেদিত।
রাবেয়া খাতুন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরের মাতা।