এমএনএ রিপোর্ট : নভেল করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দু’জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরও ছয়জন। সবমিলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৫ ব্যক্তি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। দু’জনই পুরুষ। একজনের বয়স ৫৭ বছর এবং অন্যজনের বয়স ৫৫ বছর। একজন সৌদি আরব ফেরত হলেও অন্যজনের বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এদের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে ভুগছেন। অন্যজন ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং দু’জনই সুস্থ আছেন। যার বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই, তার সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া আগে থেকে চিকিৎসাধীন আরও ছয়জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন। নতুন সুস্থদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও দু’জন নারী। তাদের মধ্যে একজন নার্সও রয়েছেন। ওই ছয়জনের মধ্যে একজনের বয়স ৭০ বছর, চারজনের বয়স ত্রিশ থেকে চল্লিশের ঘরে, একজনের বয়স চল্লিশের বেশি। দেশে বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭৫ জন এবং ৪৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে ডা. ফ্লোরা বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে ঘরে থাকতে হবে এবং মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস রোগী প্রথম শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিনে দিনে সংক্রমণ বেড়েছে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ছুটির সময়ে অফিস-আদালত, গণপরিবহন সব বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি বন্ধের আওতামুক্ত। জনগণকে স্বাস্থ্য মেনে চলতে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।
বিএমএ’র পিপিই, স্যানিটাইজার বিতরণ : বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদি (পিপিই) এবং জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রদান করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উল্লিখিত সামগ্রী গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে পিপিই গ্রহণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম নাসির উদ্দিন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া এবং উপপরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ এসব গ্রহণ করেন।
এ সময় বিএমএ’র অন্যান্য নেতার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া (ডাবলু), ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডা. মো. কামরুল হাসান (মিলন), ডা. মোহা. শেখ শহীদ উল্লাহ, ডা. সোহেল মাহমুদ, ডা. পূরবী রানী দেবনাথ, ডা. মো. জাবেদ প্রমুখ।
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ : জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, ডা. অনুপ কুণ্ডু এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, দুর্নীতি আর লুণ্ঠনে গত ৪৯ বছরে বেহালদশা হয়েছে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার।
বিগত ৪৯ বছরে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কর্পোরেট হাসপাতালসহ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন স্বাস্থ্য সেবা খাত। এই বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অবাধ বাণিজ্যিকীকরণে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রথম থেকেই সরকারের যথাযথ প্রস্তুতির অভাব জনমনে বড় ধরনের আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। সংক্রমিতদের শনাক্ত করা, আইসোলেশনে নেয়া ও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। দেশের জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবিলম্বে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে হবে।
হৃদরোগ চিকিৎসকদের মধ্যে পিপিই প্রদান : ঢাকা মহানগরীর হৃদরোগ চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) প্রদান করেছেন বাংলাদেশ রেডিয়াল ইন্টারভেনশন কোর্স পরিচালক ও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন।
গত সোমবার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের মিলনায়তনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৫০০ পিপিই প্রদান করা হয়।