জন্মদিন উপলক্ষে আজ ঢাকার চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ ‘হুমায়ূন মেলা’। বেলা ১১-০৫ মিনিটে উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত থাকবেন হুমায়ূন আহমেদ পরিবারের সদস্য, নাট্যব্যক্তিত্ব, কবি-সাহিত্যিক, চ্যানেল আইর পরিচালকবৃন্দ ও বিশিষ্ট সাংবাদিকরা।
মেলায় থাকবে হুমায়ূন আহমেদের বই, চলচ্চিত্র, নাটকের ডিভিডির স্টল। মেলায় পরিবেশিত হবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান।
স্মৃতিচারণ করবেন মেলায় আগত বিশিষ্টজনরা। বিকেল ২টা পর্যন্ত মেলা সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই ও রেডিও ভূমি। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ পাঠকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তার সৃষ্টি হিমু, মিসির আলী, বাকের ভাই চরিত্রগুলো পেয়েছে ‘অমরত্ব’। ১৯৮০-৯০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ধারাবাহিক এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রচনা করেন তিনি। ১৯৮৩ সালে তার প্রথম টিভি কাহিনীচিত্র ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার শুরু হলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
তার টেলিভিশন ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে রয়েছে– ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘নিমফুল’, ‘তারা তিনজন’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন’, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘সবুজ সাথী’, ‘উড়ে যায় বকপঙ্খী’, ‘এই মেঘ এই রৌদ্র’ প্রভৃতি৷ এ ছাড়া ‘খেলা’, ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কাণ্ড’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভুবন’-এর মতো নাটকগুলোর সংলাপ এখনো অনেকের মুখেই শোনা যায়৷ হুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। গীতিকার হিসেবেও তিনি নন্দিত হয়েছেন। তার লেখা গান অসংখ্য মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। ২০১২ সালে তার পরিচালনার সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায়।
তবে হুমায়ূন আহমেদ সর্বজন প্রিয় হয়ে আছেন হিমু ও মিসির আলী চরিত্রের স্রষ্টা হিসেবে। এ ছাড়া তাকে বলা হয় তারকা গড়ার কারিগর। তার হাত ধরে অনেক অভিনয় ও সংগীতশিল্পী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও দোসরদের হাতে শহীদ হন। মায়ের নাম আয়েশা ফয়েজ। তার দুই ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব। প্রত্যেককেই লেখালেখিতে পাওয়া গেছে।
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক৷ দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’৷
২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক।
হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ বুধবার। এ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রদান করা হলো তার নামাঙ্কিত সাহিত্য পুরস্কার ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯’।
মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ উপন্যাসের জন্য সাদাত হোসাইন। পুরস্কার হিসেবে রাবেয়া খাতুনকে পাঁচ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। সাদাত হোসাইনকে দেওয়া হয় এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন এই পুরস্কারের জন্য গঠিত বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
আবদুল মোমেন বলেন, ‘সমাজের অবক্ষয় দূর করতে পারে সৃজনশীলতার চর্চা নানা। হুমায়ূন আহমেদের নামাঙ্কিত এ পুরস্কার এই অঙ্গনের মানুষদের অনুপ্রেরণা দেবে। ’
আসাদুজ্জামন নূর বলেন, ‘ হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন মানুষ যিনি অবিস্মরণীয় কিছু সৃষ্টি করে গেছেন। তিনি সৃষ্টিগুলো করেছেন বলেই আমরা কাজগুলো করতে পেরেছি। ’
অনুষ্ঠানে অতিথিদের পাশাপশি কথা বলেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও লেখকের ছোট ভাই শিক্ষাবিদ লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘সারা দেশে যখন রাজাকারদের কথা উচ্চারণ করা অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল তিনি তখন টিয়া পাখির মুখ দিয়ে ‘তুই রাজাকার’ উচ্চারণ করিয়েছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ নিজে যা বিশ্বাস করতেন তা-ই করতেন।