Don't Miss
Home / দিবস / বৈশ্বিক দিবস / বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ

এমএনএ ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ। ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দশম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হবে আজ ২ এপ্রিল রবিবার। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘স্বকীয়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের পথে’।

দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা অর্ধকোটির বেশি। তবে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা গেলে প্রতিবন্ধীরাও নিজেদের অধিকার রক্ষায় সচেতন হবে এবং যোগ দেবে উৎপাদনশীল কাজে। এখন সহায়তার পাশাপাশি দরকার সামাজিক সচেতনতা।

অটিজম শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা। ১৯৪৩ সালে আমেরিকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার সর্বপ্রথম মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে রোগটি শনাক্ত করে অটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন। দিবসটি উপলক্ষে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে শিশুরা নৃত্য ও গান পরিবেশন এবং আবৃত্তি করবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি জরিপে বলা হয়েছে ঢাকা শহরে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে-বাংলাদেশে প্রায় ১শতাংশ শিশু বা ব্যক্তি অটিজমের বৈশিষ্ট্য বহন করছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণ জরিপে (২০১৩-২০১৬) বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা ৪১৩২৯ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রতিবন্ধীর জীবনে বঞ্চনা ও বিচ্ছিন্নতা একটি পর্যায়ক্রমিক ধারা সৃষ্টি করে। প্রায় সব অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীতে এমনকি সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে অবহেলা করা হয়। তাদের প্রতি অসম দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ প্রবল। বাংলাদেশে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। অটিস্টিক ব্যক্তিদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে, অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, মানবহিতৈষী সংগঠন, সুধী সমাজসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আর সরকারের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘অটিজম’ বিষয়টি আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি অত্যাবশ্যকীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা, গ্লোবাল অটিজম
পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদের অবদান সবচেয়ে বেশি।

গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ ২০১২ সালে জাতিসংঘে অটিস্টিক শিশু ও তার পরিবারের সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের জন্য আর্থ-সামাজিক সহায়তা শীর্ষক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়।

দেশে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল স্থাপন, ঢাকার মিরপুরে জাতীয় বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, ৬৪ জেলায় ৬৮টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিকসহ সবক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সমধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুত সরকার। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ ও বিত্তবানদের প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে
এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে প্রান্তিক ও বঞ্চনার শিকার প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুরা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, অটিজম সম্পর্কে এখনও দেশের মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অটিস্টিক শিশুদের ব্যবহারের কারণে পাগল বলা হয়।

এমনকি ভুল চিকিৎসা করে অনেক শিশুকে অকালে মেরে ফেলা হয়। অটিস্টিক শিশুরা বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে খুব দক্ষ হয়। তাই এদের প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত না করে বিশেষ শিশু বলা উচিত।

বাংলাদেশের অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অটিজম মোকাবিলায় পরিবারগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী জীবনব্যাপী অধিকতর সাশ্রয়ী, টেকসই ও সহায়ক আন্তঃখাত কর্মসূচি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিসে (আইপিএস) গত শুক্রবার প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘অটিজম মোকাবিলায় এমন কোনো সহজ সমাধান নেই যার মাধ্যমে বিদ্যমান চিকিত্সা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে তা বাস্তবায়িত করা যায়। এর পরিবর্তে, পরিবারগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী জীবনব্যাপী অধিকতর সাশ্রয়ী, টেকসই ও সহায়ক আন্তঃখাত কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে।’

সায়মা ওয়াজেদ বলেন, বিগত পাঁচ বছরে রাজনৈতিক সমর্থন ও জাতীয় শিক্ষার নীতির কারণে বাংলাদেশে অটিজমের ওপর সচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও তহবিল ও সম্পদের অভাবে তাদেরকে যথাযথ সেবা প্রদান করা এখন সম্ভব হয়নি। তবে অব্যাহত অগ্রগতির ফলে আমরা নিশ্চিতভাবেই আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। আমাদের অসামান্য এই সাফল্যের পেছনে জনসচেতনতা ও যেসব পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত অটিজমকে মোকাবিলা করছে তাদের কৃতিত্ব রয়েছে।

১৯৯০ এর দশকে সমন্বিত প্রতিবন্ধী নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ধরনের পরিবারগুলোর জন্য আমাদের মিশন শুরু হয়। পাশাপাশি জাতীয় ফোরাম ও প্রতিবন্ধী সংগঠন গড়ে তোলা হয়।

সায়মা ওয়াজেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং অটিজম বোঝার ক্ষেত্রে ধারণা বৃদ্ধির ফলে রোগ নির্ণয়ে উন্নতি, চিকিত্সার চাহিদা এবং উদ্ভাবনী পন্থার মধ্যে অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার যোগ্য।

সায়মা বলেন, এই এপ্রিলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা-এসইএআরও কে সঙ্গে নিয়ে সূচনা ফাউন্ডেশন ভুটান ও বাংলাদেশ পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভুটানে অটিজম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সংগঠিত করে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করবে। বিশেষজ্ঞ, স্ব-প্রচারণাকারী, পরিচর্যাকারী ও নীতি নির্ধারকরা অটিজম নিয়ে আলোচনার জন্য থিম্পুতে তিন দিনের এক বৈঠকে মিলিত হবেন। গত পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তিনি রাজনৈতিক সমর্থন এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানান।

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াটিক নিউরোডিজঅর্ডার এন্ড অটিজমের (ইপনা) উদ্যোগে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অটিস্টিক শিশুদের অংশগ্রহণে ‘আপন আনন্দে আঁকি’ শীর্ষক এক আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজ কল্যাণ সচিব মো. জিল্লার রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর জো হিয়ুন গ্যিয়ু। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইপনা’র প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার, আর্ট ক্যাম্পের বিচারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং বিশিষ্ট চিত্র ও নাট্য অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। আর্ট ক্যাম্পে ঢাকাসহ সারাদেশের বিশেষায়িত স্কুলের দেড় শতাধিক অটিস্টিক শিশু অংশ নেয়। সেরা দশ শিশুকে পুরস্কৃত করা হয়।

x

Check Also

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ তম জন্মবার্ষিকী

এমএনএ রিপোর্ট : আজ ঐতিহাসিক ১৭ ই মার্চ , আজকের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ...